জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে কাজ করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি তো গত ১৫ বছরে কী হয়েছে? গত ১৫ বছর আপনারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ফ্যাসিস্টকে সমর্থন করেছেন। এটা আমাদের দেখা, এ দেশের মানুষের দেখা। সেই জায়গাগুলোতে আপনাদেরও কমিটমেন্টের প্রয়োজন আছে, আপনারা ওই জায়গাগুলো থেকে নিজেরা বাইরে থাকবেন, আপনাদের কমিটমেন্ট থেকে জনগণের কাছে স্বাধীন সাংবাদিকতা করবেন।’ গতকাল সোমবার বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদমাধ্যম সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সভায় নিজের মত তুলে ধরেন তিনি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও কর্মীবান্ধব সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় করণীয় নিয়ে রাজনীতিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা কথা না বলে পারছি না, আপনাদের সাংবাদিকদের তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছেÑ বিএফইউজে, ডিইউজে। আবার দুই দলের দুই ভাগ, তিন ভাগ আছে। নিজেরাই তো আপনারা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পকেটে ঢুকতে দিতে চায় না, কিন্তু আপনারাই যদি পকেটে ঢুকে যান, তখন কিন্তু দ্যাট বিকামস্ আ প্রবলেম।’
বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সংবাদমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার, আমার ৩১ দফায় বলেছি, আমরা একটা স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই, সে জন্য আমরা তখনই কমিটমেন্ট করেছিলাম একটা কমিশন তৈরি করব। কমিশন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে, দুঃখের সঙ্গে আমরা জানলাম, কমিশনের রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, কিন্তু রিপোর্টটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আশা করি, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণের মাধ্যমে পাই, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব বলে আমরা বিশ^াস করি।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই সংবাদমাধ্যমের উন্নয়ন হয় দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশের সমস্ত পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া, সেই পত্রিকাগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলছিল। এ অবস্থা থেকে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় এসেছেন, তখন তিনি একটা মুক্ত স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। তখন অনেক সংবাদপত্র বেরিয়ে এসেছে এবং মাধ্যমগুলো চালু হয়েছে। আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি, বিএনপি যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত করার জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে। তার মধ্যে আজকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমরা দেখছি, সেই সময় কিন্তু কাজগুলো শুরু হয়েছিল।
রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ করে এই প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, ‘সংস্কার যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ না করি, মনের মধ্যে না নিই, তাহলে এভাবে সংস্কার কতটুকু সম্ভব হবে, আমি জানি না।’
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বারবার, বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর বলে আসছি; আপনারা বিগত ১৫ বছরের মতো আর কাউকে বিদেশে চলে যেতে হয়, পালাতে হয় এমন করে আমাদের (রাজনীতিবিদ) তুলে ধরবেন না, তৈরি করবেন না। সে ক্ষেত্রে আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতা আছে, দুর্বলতা আছে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ত্রুটি আছে; সেগুলো তুলে ধরে আমাদের শাসন করার দায়িত্ব আপনাদের আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, শাসন করার এ দায়ভার আপনাদের নিতে হবে অত্যন্ত ন্যায়-নিরপেক্ষতার সাথে। একটু আগে আমাদের সামনে যে কথা শুনেছি, আপনারা আমাদের কেউ হবেন না। কিন্তু আমি আপনাদের কাছে একটা আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা অবশ্যই বাংলাদেশের হবেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের একটা বড় সংকট হলো তাদের সম্মানী, পারিশ্রমিক ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। আমরা সময় সময় এটা দেখেছি; আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের যে সাংবাদিকেরা আছেন, আমরা যদি জেলা ও উপজেলা শহরের সাংবাদিকদের দিকে তাকাই, তাদের সুর্নিদিষ্ট কোনো বেতনকাঠামো নেই। তারা মাস শেষে বেতনটাও পান না। তাদের নির্ভরশীল ও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এই যে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা, সেটাও স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটা ব্যাঘাত তৈরি করে। যদি জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী থেকে তাদের জীবন চালাতে হয়, তাহলে সংবাদ প্রকাশের সময়ও কিন্তু তাদের সেই রাজনৈতিক দল বা নেতা বা সেই যে প্রতিষ্ঠান, তাদের মতো করে সংবাদ পরিবেশনের একটা মনস্তাত্ত্বি¡ক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেই জায়গাটাতে একটা পরিবর্তন দরকার।

