শীতের আগমনীতে প্রাণ পেয়েছে ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল। মাঠে মাঠে রঙিন ফুলের চারা। কুয়াশা ভেদ করে চাষে ব্যস্ত ফুলচাষিরা। ফুলের গন্ধে ম-ম করছে চারদিক। মাঠজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে ফুল চাষের ভরা মৌসুম ধরা হয়। ভরা মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শীতের শুরুতেই গদখালীর মাঠজুড়ে ফুটতে শুরু করেছে নানা রঙের ফুল। নানা ফুলের মাঝে টিউলিপ-চাষির প্রাণে সৃষ্টি করেছে নতুন আশা। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ করে চমক দেখিয়েছেন কয়েকজন চাষি।
চাষিরা এখন সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত বীজতলা তৈরিতে, জমিতে সেচ ও পরিচর্যায়। আগাছা নিড়ানো, স্প্রে করা, মরা গাছ তুলে ফেলাÑ সব মিলিয়ে ফুলের মৌসুম সামনে রেখে চলছে উৎসবের আমেজ। আসন্ন বিজয় দিবস, নববর্ষ, বসন্তবরণ, ভালোবাসা ও শহিদ দিবসের বাজারকে কেন্দ্র করেই চলছে ফুল চাষের প্রতিযোগিতা।
ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালী, নাভারণ, পানিসারা ও মাগুরা ইউনিয়নের একাংশ বাণিজ্যিক ফুল চাষের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের বৃহত্তম ফুল উৎপাদক যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার উৎপাদিত ফুল বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রতিদিনই সরবরাহ হয়। দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ ফুল সরবরাহ হয় গদখালী থেকে।
এখানকার উৎপাদিত ফুল ইউরোপের পাঁচটি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। রং-বেরঙের গোলাপ, গ্লাডিউলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল রপ্তানি হয়ে থাকে। ফুল উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন গ্রামীণ এই জনপদের ফুলচাষিরা। নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবীর কর্মসংস্থান হচ্ছে এখানে।
গদখালীতে অন্য ফুলের পাশাপাশি টিউলিপ চাষেও ভালো ফল পাচ্ছেন চাষিরা। টিউলিপ-চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, ‘টিউলিপ মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল চাষে সাধারণত ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এমন আবহাওয়া বাংলাদেশে বিরল হলেও গদখালীর অনুকূল মাটি ও শীতকালের হালকা ঠান্ডা এই ফুল চাষে আশাব্যঞ্জক সাড়া দিয়েছে।’ স্থানীয় কৃষিবিদেরা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ে গদখালী হতে পারে নতুন দিগন্তের সূচনা।
ফুলের ভরা মৌসুম সামনে রেখে বাজারেও শুরু হয়েছে সরব প্রস্তুতি। গদখালী ফুলবাজারে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার ফুল। পাইকাররা আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে। গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা দরে, রজনীগন্ধা ৬ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২-১৫ টাকা আর জারবেরা ১২-১৪ টাকায়।
গদখালী ফুল চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘যশোর অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি ১২ শতাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করেন। দেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই সরবরাহ হয় এখান থেকে।’ ফুল চাষে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিদের মনে জন্মেছে নতুন আশার আলো। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এই মৌসুমে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এখন বিদেশি কিছু ফুলও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে। এই ফুল চাষের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার কৃষক এবং ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক সরাসরি যুক্ত। বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফুলের লেনদেন হয় এই অঞ্চলে। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি, যাতে ফুলের বাগানের পরিধি দিনে দিনে আরও বাড়ে।’

