ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বললেন মির্জা ফখরুল

তারেক রহমান ফেরার দিন যেন বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০৬:৫৩ এএম

তারেক রহমান ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরছেন বলে ফের বার্তা দিল বিএনপি। তবে কবে তিনি দেশের মাটিতে পা রাখবেন তা খোলাসা করা হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশের সকল স্থানের নেতারা উপস্থিত আছেন; আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমাদের নেতা খুব শিগগিরই আমাদের মাঝে আসবেন। আমাদের নেতা যেদিন আমাদের কাছে আসবেন, যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন; সেদিন যেন সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। এই কথাটা আপনাদের মনে রাখতে হবে, পারবেন তো। ইনশা আল্লাহ, সেই দিন আমরা গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে চাই। ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল। এদিনই সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে।

দেড় যুগ ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত বিএনপি নেতা তারেক রহমান নভেম্বরে দেশে ফিরবেন বলে দলটির নেতারা বলে আসছিলেন। এর মধ্যে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তারেকের মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলে তার দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়। তবে গত ২৯ নভেম্বর তারেক নিজেই ফেসবুক পোস্টে বলেন, দেশে ফেরার বিষয়টি তার ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন’ নয়। তার এমন বক্তব্যের পর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই, প্রগতির দিকে এগোতে চাই। বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের নেতার যে চিন্তাভাবনা, তা বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই লড়াই নির্বাচনে জয়ের লড়াই। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন সংগ্রাম-লড়াই হচ্ছেÑ এই নির্বাচনে জয়লাভ করার সংগ্রাম। এই নির্বাচনে আমাদের পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে। যাতে করে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রচার হচ্ছে, হতে থাকবে। কিন্তু এ সব কাটিয়ে উঠে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বিএনপি কোনোদিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে এই দেশের জনগণের দল, বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের সংগ্রামের দল; এই কথাগুলো সবসময় মাথার মধ্যে রাখবেন। আর অন্য কোনো কিছু আপনাদের সাফল্য দেবে না। আপনাদের সাফল্য দেবে আপনাদের মধ্যে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য এবং আপনাদের যে চেতনা সামনের দিকে যাওয়ার, জাতীয়তাবাদী দর্শনে আমরা দীক্ষিত হয়েছি, আমরা যে গণতন্ত্রের দর্শনে দীক্ষিত হয়েছিÑ সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার এই চেতনা।’

একাত্তর আমাদের অস্তিত্ব উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্ব; এ কথাটা খুব জোরেশোরে মনে রাখবেন। আমি পত্রিকায় দেখলাম, ১৯৭১ সালের প্রজন্ম নাকি নিকৃষ্টতম প্রজন্ম। কোন সাহসে এই কথা বলার দুঃসাহস দেখান তারা; ঔদ্ধত্য দেখান তারা? সেই অপশক্তি রুখতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমাদের রুহুল কবির রিজভী সাহেব এখানে বলেছেন, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না? আরেক ফ্যাসিজম অন্যদিক থেকে আমাদের ওপর চেপে বসতে চাইছে কি না? আজকে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রিয় ধর্মকে ব্যবহার করে তারা আজকে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে কিনা? সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, আজকে নতুন যে লড়াই একদিকে, বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে দাঁড় করাবার লড়াই। আরেকদিকে হচ্ছে এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার লড়াই; এই দুটিকে নিয়েই আপনাদের এগোতে হবে। আমরা সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি করি, আমরা সবসময় অগ্রবর্তী চিন্তা করি। গত রোববার থেকে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মশালায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

তাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন,  এখানে যেসব আলোচনা হবে, শুধু শুনবেন আর নোট নিলেই হবে না। এগুলোকে জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে হবে যে, আমরা এই কাজগুলো করতে চাই। এটাই যদি আপনারা করেন, তা হলে নিশ্চয়ই জনগণ আপনাদের দিকে আকৃষ্ট হবে, আপনার জনগণকে উইন ওভার করতে হবে। মানুষের জীবনই হচ্ছে সংগ্রাম, মন্তব্য করে তিনি বলেন, তেমনই একটা জাতিকে উপরে উঠতে হলে তাকে সংগ্রাম করে উপরে উঠতে হয়। আমরা সেই কথা বারবার প্রমাণ করেছি; বারবার আমাদের জনগণ প্রাণ দিয়েছে, আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। এইবারের ছেলেরা যেটা প্রাণ দিয়েছে চব্বিশের জুলাই যুদ্ধে এবং তার আগে একাত্তরে যে যুদ্ধ আমরা করেছিÑ এটাকে এক করে আমাদের সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা এই লড়াইয়ে জয়লাভ করার শপথ গ্রহণ করি। বক্তৃতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় সবার দোয়া চান দলের মহাসচিব।

‘দেশ গড়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।