ঢাকা রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আয়না

নেয়ামুল নাহিদ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:৫২ এএম
আয়না

-‘শ্যাম্পুর দাম কত?’
-‘তিন টেকা।’
-‘কম দামি নাই?’
-‘আছে, দুই টেকা।’
-‘দ্যান তো একটা।’

দুই টাকার শ্যাম্পু নিয়ে লাজুক মুখে সোজা হাঁটা দেয় জলিল। অনেকদিন পর হঠাৎ কিছু একটা করতে গেলে এ রকম হতেই পারে। কতদিন আগে শ্যাম্পু দেওয়া হয়েছিল সে কথা জলিলের মনে নেই। আজ ইচ্ছা হলো, তাই প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে দোকানে যাওয়া শ্যাম্পু কিনতে। এই সামান্য কাজে লোকচক্ষুর আড়াল হওয়ার কারণ জলিল নিজেও স্পষ্ট জানে না।

আবাসিক ভবনের উপরে মাদ্রাসা, চার তলায়। এ রকম জায়গায় মাদ্রাসা সচরাচর চোখে পড়ে না। জলিলের মনে হয় এও ভাগ্য! এ রকম একটা মাদ্রাসা আছে বলেই না এই বয়সেও তার দারোয়ানের চাকরি জুটে গেছে।

দুই টাকার শ্যাম্পু নিয়ে জলিল গোসলখানায় ঢুকল। মাথায় আচ্ছা করে শ্যাম্পু মাখল, চুলের মধ্যে নানা কায়দায় ঘষামাজা করল। একে তো অনেকদিন পর শ্যাম্পু দেওয়া, তারপর আবার দুই টাকা উশুল করার ব্যাপার আছে। এত সময় নিয়ে গোসল করল যে দুয়েকজন বলেই ফেলল, ‘কি জলিল ভাই, এতক্ষণ গোসল করলা না ঘুমায়ে পড়ছিলা?’

শ্যাম্পু করার কথা জলিল বলে না, শুধু মুচকি হেসে কাটান দেয়। তবুও তার মনে হতে লাগল তাকে দেখতে না জানি কেমন লাগছে! বহুদিন পর শ্যাম্পু দিয়ে ঘাড়ের উপরে মাথাটার ওজন কমে গেছে মনে হলো। চুল আঁচড়ানোও দরকার। এটুকু অভিজ্ঞতা তার আছে, চুলের কারণে আর মাথায় সিঁথির কারণে মানুষের চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়।

কোন একটা পাজামার পকেটে চিরুনি ছিল। অনেক খুঁজে সেটাকে পেল জলিল। দাঁতভাঙা চিরুনি হলেও কাজ হলো।

‘কেমন লাগছে দেখতে?’- জলিলের খুব ইচ্ছা দেখার। কিন্তু আয়না তো নেই। কারো কাছ থেকে চেয়ে নেবে, এ রকম কারো কথা মনে করতে পারল না সে। আর আয়না চেয়ে নিজের চেহারা দেখার ইচ্ছা অন্যকে বোঝানোর দরকার কি?

মাদ্রাসার গেটটা এগিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো জলিল। সামনের সারির বাড়িগুলোর হাতের ডানের তিন নম্বর গেট; মনে আছে তার। কয়েকদিন আগেই নতুন গেট লাগানো হয়েছে ওই বাড়িতে। গ্রিল দিয়ে বানানো গেটের একপাশে নিরেট স্টিলের একটা অংশ। চকচক করছে, সামনে দিয়ে গেলেই স্পষ্ট দেখা যায় নিজেকে।

কেউ নেই আশপাশে। গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল জলিল। শ্যাম্পু করা মাথাটা দেখা যাচ্ছে বেশ স্পষ্ট। জলিলের মনে হলো, এই মাথা কি তার নিজের? নিজের ঘাড়ে, নিজের মাথা - তবুও কেমন অচেনা!