শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাহিত্য প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:১৫ এএম

শিশু সাহিত্যের দাদাভাই

সাহিত্য প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:১৫ এএম

শিশু সাহিত্যের দাদাভাই

শিশু সাহিত্যকে সাহিত্য সম্মোধনে অস্বীকৃতি, ছড়ার লেখককে ছড়াকার বলে কটূক্তি করার মতো অন্ধকার সময়কে হজম করে যারা শিশুদের জন্য তৈরি করেছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর শিশু সাহিত্যকে করেছেন শিল্পসম্ভারে পরিপূর্ণ; তাদের মধ্যে অন্যতম রোকনুজ্জামান খান, আমাদের চিরচেনা দাদাভাই। তিনি শুধু একজন লেখক নন; ছিলেন সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সর্বোপরি শিশুদের অকৃত্রিম বন্ধু। তার বিশেষ গুণ ছিল, শিশুর মতো করে ভাবতে পারা। আর সেই সহজাত শিশুসুলভ স্বভাবই তাকে করে তুলেছিল সবার প্রিয় দাদাভাই। ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার এক সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবারে জন্ম নেওয়া দাদাভাই শৈশব থেকেই বই-পড়ার প্রতি অদম্য আকর্ষণ অনুভব করতেন। এই পড়াশোনার নেশাই তাকে ধীরে ধীরে টেনে আনে সাহিত্যজগতে এবং পরবর্তীতে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলা শিশু সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপুরুষ হিসেবে।

বিশেষ করে নব্বই দশকে বেড়ে ওঠা শিশুদের কাছে দাদাভাই ছিলেন প্রিয় লেখক, প্রিয় নাম এবং শৈশবের অপরিহার্য অংশ। দাদাভাই তার কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা দিয়ে। ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় কাজের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন। পরে দৈনিক ইত্তেফাকের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রকাশিত সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র কুঁড়ায় কচিকাঁচার মেলার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি শুধু লেখালেখি করেই থেমে থাকেননি; বরং শিশুদের আনন্দ, নৈতিক শিক্ষা এবং কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে আয়োজন করেন নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। ছবি আঁকা, গল্প বলা, গান-নাচ শেখা, চিত্রাঙ্কন কোর্সের মাধ্যমে তিনি শিশুদের সম্পৃক্ত রেখেছেন আনন্দ ও সৃজনশীলতার সঙ্গে।

তার এই কর্মনিষ্ঠা শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকদের কাছেও তাকে পরিণত করেছে সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্বে। ‘দাদাভাই’ ছদ্মনামে তার লেখা শিশু সাহিত্যের জগতে একসময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তিনি মজার ছলে গল্প বলতেন, আর সে গল্পেই থাকত নৈতিকতা, চরিত্র গঠন, দেশপ্রেম ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। তার বিখ্যাত ছড়াগুলো ‘বাক বাক্ কুম পায়রা’, ‘হাট্টিমাটিম টিম’ শিশুদের জগতকে আজও যেমন আনন্দে ভরিয়ে রাখে, তেমনি বাংলা ছড়াকে পৌঁছে দিয়েছে জনপ্রিয়তার চূড়ায়। নব্বই দশকে রোকনুজ্জামান খান ছিলেন শিশু সাহিত্যের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। অসংখ্য নবীন লেখক ও চিত্রশিল্পী তার সম্পাদনার হাত ধরে শিশু-পত্রিকায় লেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিশুদের কল্পনা ও সৃজনশীলতা বিকশিত করতে হলে প্রয়োজন নতুন ধারা, নতুন চিন্তা ও সাহসী প্রকাশ।

তাই তার সম্পাদিত পত্রিকায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি নতুনদের লেখাই গড়ে তুলত পত্রিকার প্রাণ। তার এই উদারতা ও দূরদর্শিতা শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করেছে বহুগুণে। দাদাভাইয়ের লেখার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার ভাষা। তিনি কখনোই জটিল বা কৃত্রিম শব্দ ব্যবহার করতেন না; বরং শিশুদের উপযোগী করে সহজ, সাবলীল ও ছন্দময় ভাষায় লিখতেন। এতে যেমন গল্পগুলো শিশুদের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে উঠত, তেমনি তাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসাও জন্মাত। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, শৈশব থেকেই মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ গড়ে উঠলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আরও সচেতন, সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল। সাহিত্যজীবনের বাইরেও তিনি ছিলেন এক নীতিবান, পরিশ্রমী ও সমাজসচেতন মানুষ।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও শিশু একাডেমি পুরস্কারসহ পেয়েছেন বহু সম্মাননা। তবুও তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন কেবল একজন সাধারণ শিশু লেখক হিসেবে, যা তার বিনয়ী চরিত্রেরই প্রমাণ। ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হলেও দাদাভাই কোনোদিন হারিয়ে যাননি। তার লেখার মাধ্যমে আজও তিনি বেঁচে আছেন অসংখ্য শিশুর মনে, তাদের কল্পনার জগতে এবং আমাদের সম্মিলিত স্মৃতিতে।

তাই তো আজও যখন হাসির অভাবে মলিন হয়ে যায় পথ ঘাট এবং আমাদের চাঁদমাখা মুখ তখন আমরা সম্মলিত কণ্ঠে উচ্চারণ করি, ‘হাসতে নাকি জানে না কেউ/কে বলেছে ভাই? /এই শোন না কত হাসির/খবর বলে যাই।/খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে/চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে/কাজল বিলে শাপলা হাসে/হাসে সবুজ ঘাস।/খলসে মাছের হাসি দেখে/হাসে পাতিহাঁস... ’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!