শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এস ডি সুব্রত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাহিত্যের মানিক

এস ডি সুব্রত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন  সাহিত্যের মানিক

বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচিত্র সৃষ্টিকর্মের দ্বারা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন কল্লোলীয় ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে।  মানবমনের  গভীর জটিল মুহূর্তকে তুলে ধরে মগ্নচৈতন্যের অতলশায়ী বোধকে প্রকাশ করেছেন আপন লেখনীর মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে সফলভাবে। নিজের সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ভাবপ্রবণতার বিরুদ্ধে প্রচ- বিক্ষোভ সাহিত্যে আমাকে বাস্তবকে অবলম্বন করতে বাধ্য করেছিল।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২৯ মে, ১৯০৮ সালে সাঁওতাল পরগনার দুমকায়। বাবার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়। মা নিরদাসুন্দরী। পবিরবারটি এসেছিল ঢাকার বিক্রমপুর থেকে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষকেই তার সাহিত্যে প্রধান ভূমিকায় স্থাপন করেছেন। পূর্ববঙ্গের অতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেমন তার নৈকট্য ছিল, অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক কৃষক সর্বহারা মানুষও ছিল যেন তার মনের সঙ্গী, যাদের নিখুঁত নিপুণ বাস্তব রূপালেখ্য তার সাহিত্য। আঞ্চলিক উপন্যাসেরও তিনি বড় শিল্পীÑ‘পদ্মানদীর মাঝি’তে পদ্মানদীর মাঝি ও সন্নিহিত নি¤œবর্ণের মানুষদেরে জীবনচর্চার যথার্থ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অরুগ্ন বলিষ্ঠ উদ্দাম জীবনচর্যাকেও তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন যার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘প্রাগৈতিহাসিক’। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য রচনায় তিনি মানিক নামটি ব্যবহার করেন। হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি চাকুরে। সে কারণে তাকে প্রায়শই বদলি হতে হতো।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাবা-মার সঙ্গে অনেক জায়গা ঘুরেছেন। বিবিধ পরিবেশে নানা শ্রেণির মানুষ দেখেছেন এবং এই মানুষই তার গল্প ও উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধচারণ করেছে তার বলিষ্ঠ লেখনী। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কৃষ্ণবর্ণ আর অসম্ভব দুঃসাহসী । কোনোকিছুতেই ভয় ছিল না তার ।  ছোটবেলাতে একবার খেলতে খেলতে আঁশবটিতে পেট কেটে ফেলেন, একবার জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে পা পুড়িয়ে ফেলেন আর একবার বারুদ দিয়ে বাজি বানাতে গিয়ে ভীষণভাবে আহত হয়ে পড়েন, তবু তিনি তার দস্যিপানা ছাড়েননি। কৈশোরে ছিলেন মেদিনীপুরে। মেদিনীপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। অঙ্কে অনার্সসহ বিএসসি পড়তে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে।

প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় তিনি ‘অতসী মাসী’ নামে একটি গল্প লিখেন বিখ্যাত সাহিত্যপত্রিকা বিচিত্রায় গল্পটি ছাপা হয় এবং প্রথম গল্পেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন সাড়া তোলেন যা খুব কম লেখকেরই কপালে জুটে থাকে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র একুশ বছর বয়সে লিখলেন তার প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’। লেখালেখিতে অতিশয় মগ্ন হয়ে পড়ার কারণে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের  পক্ষে বিএসসি পরীক্ষা দেওয়া  হলো না। তিনি সাহিত্যকে তার জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন?Ñ যা তখনকার  সময়ে ছিল অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত। কল্লোল পত্রিকাকে ঘিরে তখন একদল শক্তিমান কথাসাহিত্যিক নিজেদের মেলে ধরছেন। এদের মধ্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রবোধ সান্যাল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তাদের সঙ্গে গিয়ে যুক্ত হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে, সে সময়ের সুখ্যাত পত্রিকা ভারতবর্ষ’-এ প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘জননী’। সেই পত্রিকাতেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী আরও দুটি উপন্যাসÑ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ এবং ‘পদ্মা নদীর মাঝি’।

দুঃখ দারিদ্র্যে জর্জরিত নর-নারীর অমন জীবন্ত আলেখ্যের আগে অন্য কোনো বাঙালি ঔপন্যাসিকের কলমে ফুটে ওঠেনি। অথচ ওই স্তরের অবহেলিত মানুষদের মধ্যেই রয়েছে অযতœরক্ষিত অমসৃণ কত হীরকখ-। তার বহুবিধ অভিজ্ঞতার মহিমা রয়েছে তার রচিত প্রতিটি রচনায়। কিন্তু লিখে যথেষ্ট আয় হতো না লেখকের। অথচ লেখার স্বার্থেই তিনি কোথাও চাকরিও নেবেন না। ভালো বেতনের চাকরি গ্রহণে অস্বীকার করেছেন। অর্থাভাবে যখন ধুকছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে কিছু বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। লেখক জীবনের দ্বিতীয়ার্থে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মার্কসবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ফলে ভাববাদের আরও বিরোধী হয়ে উঠলেন।

কিছু ক্ষেত্রে তার রচনা খানিক স্লোগানধর্মীও হয়ে ওঠে। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিকাংশ রচনাই বাংলা সাহিত্যের মহামূল্য মণিরতœ। তার ছোট গল্পগুলোও অনন্য। আর উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ‘হলুদ নদী সবুজ মন’ ‘অমৃতস্য পুত্রা’ ‘শহরতলী’ ‘প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান’ ইত্যাদির তুলনাই হয় না । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময়  অনুভব করলেন শিল্পীর দায়িত্বÑ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক ত্রুটি বিচ্যুতি অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বরূপ নির্ণয় করা এবং তা দূর করে শাসন শোষণমুক্ত নতুন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ দিকের রচনায় বিশেষত ছোট গল্পে বৈজ্ঞানিক

দৃষ্টিকোণ সংবলিত শ্রেণিচেতনার স্বরূপ নির্ণয় ও সাম্যবাদী সমাজ প্রবর্তনার ভাবনা প্রবল রূপ পেয়েছে। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৬, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বাংলা সাহিত্যের মানিক, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান পরলোকে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!