শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

বেবিচকে গোপন টেন্ডারে ৪৭ পরামর্শক নিয়োগের পাঁয়তারা

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

বেবিচকে গোপন টেন্ডারে ৪৭  পরামর্শক নিয়োগের পাঁয়তারা

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রশাসন এবার ঘুপচি টেন্ডারে অর্থাৎ, গোপন টেন্ডারে ৪৭ জন পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতেই অনলাইন বাদ দিয়ে অফলাইনে ঘুপচি টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগের এই পাঁয়তারা করছে বেবিচক। বিমান মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে বেবিচকে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী দোসররা এই ঘুপচি টেন্ডারের আয়োজক বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড রেগুলেশনস (এফএসআর) বিভাগের  মতামতকেও পাশ কাটানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি অর্থে পরিচালিত যেকোনো সেবা কিনতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন (পিপিআর) অনুযায়ী উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক। কনসালটেন্ট বা পরামর্শক নিয়োগ সেবা ক্রয়ের অংশ। কিন্তু পিপিআর অনুসরণ না করা আইনের লঙ্ঘন। গোপনে টেন্ডার করার অর্থ এখানে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকছে না।

গত ২৬ নভেম্বর বুধবার টেন্ডার বাক্স উন্মুক্ত করা হয়। বাক্স খোলার পর দরপত্র কমিটি ৪৭টি পদের বিপরীতে ১৩০ জনের আবেদন পায়। গোপনে টেন্ডার আহ্বান করায় বেবিচকে আগে যারা চাকরি করেছেন কিংবা যারা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে পরামর্শক ছিলেন, তারাও আবেদন করেছেন। যারা বেবিচকের সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট নন, তারা এই গোপন টেন্ডারের বিষয়টি জানতে না পারায় আবেদনও করতে পারেননি।

শোনা যায়, পুরো প্রক্রিয়া এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয় যে, বেবিচকের ভেতরের অনেক কর্মকর্তা পর্যন্ত বিষয়টি জানতেন না। এই ৪৭ পরামর্শকের প্রতিজনের গড়ে মাসিক বেতন ৫-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। পরামর্শকদের এই বিরাট অঙ্কের বেতন নির্ধারণ নিয়ে বেবিচকের কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও তা ধোপে টেকেনি। এতে করে বেবিচক হবে মাথাভারী প্রতিষ্ঠান, সরকারকে মাসে গুনতে হবে কোটি কোটি টাকা। বেবিচক-সংশ্লিষ্ট বিশ^স্ত সূত্র জানায়, বিমান মন্ত্রণালয় পিপিআর অনুযায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে বলেছিল। এমনকি বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি শাখা থেকেও পিপিআর অনুযায়ী নিয়োগের প্রস্তাব করে। কিন্তু বেবিচকের প্রশাসন শাখা রহস্যজনক কারণে পিপিআর অনুসরণ না করে নিয়োগের আয়োজন করেছে। ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, সিভিল অ্যাভিয়েশনে পরামর্শকদের প্রধান কাজ সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা ও সিকিউরিটি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া, বিমানবন্দর নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরি ও আপডেট করা, আইকাওর নিরাপত্তা মান মেনে বিমান চলাচল নিশ্চিত করা, এয়ারক্রাফট অপারেশন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কার্গো নিরাপত্তা অডিট এবং নিরাপত্তা ঘাটতি শনাক্ত করে সংশোধনের সুপারিশ করা।

এ ছাড়া তারা এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও নেভিগেশন সিস্টেম, রাডার, যোগাযোগকাঠামোর উন্নয়ন, বিমানবন্দর অবকাঠামো ও প্রকৌশল পরিকল্পনা, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা, রেগুলেশন ও নীতিমালা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকেন। পাইলট লাইসেন্সিংসহ বিভিন্ন খাতেও দায়িত্ব পালন করেন এসব পরামর্শক। বেবিচকে এ খাতে দক্ষ জনবল না থাকায় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) মানদ- বজায় রাখতে এসব পরামর্শক নিয়োগ হয়ে আসছে। কিন্তু এর আগের আমলের পরামর্শকদের কারো কারো দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে সময় এক ফ্লাইট সেফটি বিভাগেই ৩৪ জন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় এদের নিয়োগ বাতিল করে পিপিআর অনুযায়ী ওপেন টেন্ডারে পরামর্শক নিয়োগ দেয় এবং নিয়োগ ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে নিয়ে যায়। কিন্তু  এবার অতি গোপনে ঘুপচি টেন্ডারে এদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে ষোলকলা পূর্ণ হতে যাচ্ছে বেবিচক প্রশাসন বিভাগের। বেবিচকে চাউর আছে, এবারের গোপন পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ার নেপথ্যে মোটা অঙ্কের উৎকোচ লেনদেন হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতিপূর্বে বেবিচক চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বেবিচকের এ প্রক্রিয়াকে আইনি ভিত্তিহীন বলে বাতিল করে দেয়। তখন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষ জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বেবিচক ওই প্রক্রিয়াকে এবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গোপন দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ ব্যাপারে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, সরকারি ক্রয় পদ্ধতির মূল ধারণা হলো রাষ্ট্রের প্রতিটি টাকার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ মান অর্জন করা। যখন কোনো সংস্থা গোপনে বা সীমিত দরপত্রে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পক্ষকে সুবিধা দেয়, তখন সেখানে ন্যায়বিচার বা স্বাভাবিক ন্যায্যতার লঙ্ঘন ঘটে। ৪৭ পরামর্শদাতা নিয়োগ কোনো ছোট ঘটনা নয়। এর পেছনে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ ব্যয় হবে। তাই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি স্বচ্ছ হওয়া জরুরি ছিল।

সার্বিক বিষয়ে বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) এস এম লাবলুর রহমান গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। পিপিআর মেনেই পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’ তাহলে গোপন টেন্ডারে কেন করলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্যরি, আমি আর কোনো রকম বক্তব্য দেব না, আপনি পিআরওর সঙ্গে কথা বলুন।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!