আদা আমাদের রান্নার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা প্রতিদিন যা রান্না করি তার মধ্যে কোনো না কোনো রান্নায় আদা ব্যবহার হয়। আদা যেমন রান্নায় স্বাদ বাড়ায় তেমনি ঔষধি গুণও রয়েছে। বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হয় আবার। অনেকেই এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করার কথা জানেন না। বস্তায় আদা চাষে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই।
আবার একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়; এর জন্য আলাদা কোনো জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গায় এ পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনো ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। চাইলে সেই বাঁশবাগানেও বস্তায় আদা চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে, যাতে মাটি ঝুর ঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সে জন্য ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে হাড়ের গুঁড়ো, গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্য বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ। মাটিতে সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার ওপর ঢেকে দিতে পারলে ভালো হয়, তাতে মাটির আর্দ্রতা বেশি দিন থাকবে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসবে।
একটি বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি, এক ঝুড়ি পচা গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন লাগবে। বালি পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে, ফিউরাডন উইপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা করবে। মাটির সঙ্গে গোবর, বালি ও ফিউরাডন ভালোভাবে মিশিয়ে সিমেন্টের বস্তায় ভরে ঝাঁকিয়ে নিন তাতে মিশ্রনটি ভালোভাবে চেপে যাবে।
আলাদা একটি বালি ভর্তি টবে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিন। ২০-২৫ দিন পর ওই আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিন। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ পায় এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদাগাছ বাড়তে থাকবে। চারা লাগানোর দুই মাস পরে চার চা-চামচ খৈল এবং আধা চামচ ইউরিয়া প্রয়োগ করুন মাটিতে। মাঝে খুঁড়ে মাটিটা একটু আলগা করে দিলে ভালো হয়।
আদার কন্দ লাগানোর আগে ব্যাভিস্টিন স্প্রে দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। এতে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচবে। চাইলে অন্য কোনো ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করতে পারেন। শোধনের পর আধা ঘণ্টা ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।
আদা সংগ্রহ
আদা লাগানোর ছয় মাসের মধ্যে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এক একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে সবজি চাষ করা যেতে পারে। সে জন্য নতুন করে মাটি তৈরি করার দরকার নেই।
লেখক: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ