সামনইে রবি মৌসুম, শাক-সবজি চাষের জন্য অমূল্য সময়। যারা শহরে থাকেন তাদের জন্য পতিত জমি বা চাষযোগ্য জমি দুষ্কর। তাই ছাদ অনন্য বিকল্প। পালংশাক থেকে ফুলকপি, শিম থেকে পেঁয়াজকলি সবই চাষ করা সম্ভব না হলেও, কিছু সবজি চাইলে ছাদে ফলিয়ে নিতে পারেন। বাড়িতে ফলানো সবজির স্বাদই আলাদা। তবে ছাদবাগান তৈরির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কিছু বিষয়ে নজর না দিলে ছাদে সবজি ফলানো সহজ হবে না।
ছাদে চাষ করতে হলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
ছাদে বাগান দু’ভাবে করা যায়। যেমন কাঠ বা লোহার ফ্রেম এঁটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হলো টব, ড্রাম, পট, কনটেইনার এসব ব্যবহার করে। প্রথমে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে হবে।
পানি ছাদ না থাকলে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার উপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার উপর মাটি দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে পরিমাণমতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রাবার এসব ব্যবহার করা যায়। ছাদে বাগানের জন্য শুরুতেই মাটিকে ফরমালডিহাইড দিয়ে (প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১০০ মিলিলিটার ফরমালডিহাইড মিশ্রিত করে) শোধন করে নেওয়া যায়। মাটি শোধনের কৌশল হলো প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি নিয়ে বর্ণিত মাত্রায় ফরমালডিহাইড মিশ্রিত পানি মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে ৩/৪ দিন ঢেকে রাখতে হবে।
পরে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের আলোর তাপে খুলে রাখতে হবে পরবর্তী ৩/৪ দিন পর্যন্ত। ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতির মধ্যে আছে ড্রাম, বালতি, টব, কনটেইনার। এসবের যেকোনো একটি বা দুটি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ খোয়া (ইট পাথরের কণা) দিতে হবে। ইটের খোয়া পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া এবং পাত্রের ভেতরে বাতাস চলাচলে সহায়তা করে। এক্ষেত্রেও অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক পচা জৈবসারের মিশ্রণ হতে হবে। আর শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট-খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো। কেননা ফল গাছের শেকড় প্রকৃতিগতভাবে বেশ গভীরে যায়। কিন্তু ড্রাম/টব/পাত্রের সীমিত জায়গায় যথাযথভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না।
শাক জাতীয় গাছ:
পালংশাক-দ্রুত বেড়ে ওঠে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালো হয়
লালশাক- রঙে ও গুণে অনন্য, কম জায়গায় চাষ উপযোগী
মুলাশাক- মুলার সঙ্গে সঙ্গে শাকও খাওয়া যায়, দ্রুত ফলন পাওয়া যায়
সরিষাশাক- তীব্র স্বাদের, মাছ বা ভর্তার সঙ্গে ভালো খায়
ধনিয়াপাতা- রান্নার স্বাদ বাড়ায়, সহজে জন্মায় ও ঘ্রাণযুক্ত।
সবজি:
মুলা-গভীর টবে লাগালে ভালো হয়, মাটির নিচে গজায়।
গাজর- মাটির নিচে বেড়ে ওঠে, দেরিতে ফলন দেয়, কিন্তু বারান্দায় সহজ।
বিটারুট- গাজরের মতোই চাষযোগ্য, স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর।
টমেটো- শীতে ভালো ফলন দেয়, খানিকটা রোদ দরকার হয়।
বরবটি ও শিম- খুঁটির সাহায্যে বাড়ানো যায়, বেশি জায়গা লাগে না।
নওরোজ ফারহান ফামি
কৃষি উদ্যোক্তা, জয়পুরহাট
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন