শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০২:০৮ এএম

পাহাড়ি পথে নিরিবিলি জলধারা

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০২:০৮ এএম

পাহাড়ি পথে নিরিবিলি জলধারা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বিস্তৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন প্রকৃতির আঁচলে লুকিয়ে থাকা রঙিন দৃশ্যপট। আর বান্দরবান তার অন্যতম রতœভান্ডার। বান্দরবানের ভৌগোলিক পরিচিতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পাহাড়, ঝরনা ও সবুজ অরণ্য। অপার সৌন্দর্যের মিলনস্থল এই অঞ্চল ঘুরতে গেলে চোখে পড়ে ছোট-বড় নানা জলপ্রপাত, যার মধ্যে চিংড়ি ঝরনা একটি রহস্যময় সৌন্দর্যের নাম। নির্জন পাহাড়ি পরিবেশ, ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং ঝরনার একটানা জলধারা একে পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য গন্তব্যে পরিণত করেছে। বর্ষায় যখন পানির প্রবাহ চঞ্চল হয়ে ওঠে, তখন এই ঝরনা যেন আরও বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে।

অবস্থান
বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহিন পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত চিংড়ি ঝরনা। এই ঝরনা মূলত একটি পাহাড়ি জলপ্রপাত। রুমা বাজার থেকে বগা লেক হয়ে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে এটির দেখা মেলে। বগা লেক থেকে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে ঝরনাটিতে পৌঁছাতে। রুমা বাজার থেকে বগা লেক যেতে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়, যার একটি বড় অংশই ট্রেকিং বা চান্দের গাড়িতে যাতায়াতযোগ্য। ঝরনার মুখ থেকে পুরো জলধারা দেখা যায় না, তাই মূল ঝরনা দেখতে হলে পিচ্ছিল পাথর বেয়ে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে উঠে যেতে হয়। এই কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা আবশ্যিক।

নামকরণ
চিংড়ি ঝরনার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা মত, রয়েছে কিছু লোককথা। কেউ বলেন, একসময় ঝরনার আশপাশে প্রচুর চিংড়ি মাছ পাওয়া যেত বলেই এমন নামকরণ হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ঝরনার নিচে থাকা পাথরের গঠন অনেকটা চিংড়ির আকৃতির মতো, সেখান থেকেই নামটি এসেছে। নাম নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও জায়গাটির প্রকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে কারো দ্বিমত নেই।

রাত যাপনের স্থান
চিংড়ি ঝরনায় যাওয়ার পরিকল্পনায় বগা লেকে রাত যাপন অনিবার্য। সাধারণত পর্যটকেরা কেওক্রাডং বা বগা লেক ঘুরতে গিয়েই বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে ঝরনাটি দেখে থাকেন। লেকের পাশে আদিবাসীদের তৈরি কটেজগুলোতে রাতে থাকা যায়। এসব কটেজে সাধারণত ৫-৬ জন থাকতে পারেন। কাপল বা নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা থাকে। গাইডের মাধ্যমে আগে থেকে বুকিং দেওয়া ভালো, বিশেষ করে পর্যটনের মৌসুমে।

খাবার ও স্থানীয় আতিথেয়তা
বগা লেকে খাবারের ব্যবস্থা মূলত স্থানীয় আদিবাসীদের ঘরেই। সাধারণত ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে ভাত, ডিম, আলুভর্তা আর পাহাড়ি মুরগির ঝোল পাওয়া যায়। পর্যটকেরা আগে থেকে জানিয়ে রাখলে রান্না প্রস্তুত থাকে। অনেকেই লেকপাড়ে বসে পাহাড়ি বারবিকিউ উপভোগ করে থাকেন, যা ভ্রমণের ক্লান্তি মুছে দিয়ে মনে রাখার মতো একটি সন্ধ্যা উপহার দেয়।

যেভাবে পৌঁছাবেন
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিংড়ি ঝরনা যেতে চাইলে, প্রথমে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে। ঢাকায় বিভিন্ন বাস সার্ভিস থেকে নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। যাত্রা সময় ৮-১০ ঘণ্টা। বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়ি বা লোকাল পরিবহন ধরে রুমা বাজার হয়ে বগা লেক যেতে হয়। সেখান থেকেই চিংড়ি ঝরনার পথে যাত্রা শুরু হয়। পর্যটকরা চাইলে কোনো ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে যাত্রা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে গ্রুপের সাইজ, থাকা ও খাওয়ার ধরন, যাতায়াতের মান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে খরচে পার্থক্য হতে পারে।

নিয়ম-কানুন চিংড়ি ঝরনা ঘুরতে গেলে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। রুমা বাজার থেকে বগা লেক যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করতে হয়। একইভাবে ঝরনায় যাওয়ার সময়েও নাম রেজিস্ট্রির প্রয়োজন পড়ে। নিরাপত্তা বিবেচনায় সকালে রওনা দেওয়া উত্তম। বর্ষার সময় ঝরনার স্রোত বাড়ে এবং পথ কিছুটা বিপজ্জনক হতে পারে, তাই সে সময় আগে থেকেই জেনে নেওয়া উচিত ঝরনার পথ উন্মুক্ত আছে কিনা।

নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি এই ভ্রমণে যাত্রাপথ তুলনামূলক চ্যালেঞ্জিং হলেও প্রস্তুতি থাকলে তা উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখা উচিত হাইকিং জুতা, পর্যাপ্ত খাবার পানি, শুকনো খাবার, পলিথিন, পাওয়ার ব্যাংক, দরকারি ওষুধ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি। স্থানীয় আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া উচিত এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!