ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পদ্মায় ছুঁইছুঁই

রংপুর ও রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:০৩ এএম
  • লালমনিরহাটে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি, ঝুঁকিতে বাঁধ ও ফসল
  • তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
  • বৃষ্টিপাত বাড়ায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরসহ ১২ জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা পাউবোর

টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান দুই নদী, তিস্তা ও পদ্মার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে, রাজশাহীর নি¤œাঞ্চলের চরগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরসহ ১২ জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় বন্যার পর মাত্র এক দিন পানি কমলেও গত মঙ্গলবার থেকে ফের বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তৃতীয় দফায় তিস্তার বাঁ তীরের লালমনিরহাট, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারীর বহু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

প্লাবিত এলাকায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফসলের জমি, রাস্তাঘাট ও পুকুর ডুবে গেছে। অনেক পরিবার মাচাং পেতে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পশু-পাখি, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। কালীগঞ্জের দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় ইন্ট্রাকো সোলার প্যানেল স্থাপনস্থল নদীর ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে; বাঁধ ভেঙে গেলে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরও হুমকিতে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী জানান, শুধু হাতীবান্ধায়ই অন্তত দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন ও পাউবো বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি

রাজশাহী পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ৬৩ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ০.১৭ মিটার।

পানি বৃদ্ধির ফলে পবা, শিবগঞ্জ ও আশপাশের চরাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। পবা উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতলি ইউনিয়নে ১ হাজার ১০০ পরিবার, শিবগঞ্জের পাঁকা, উজিরপুর ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার ৪৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চর খিদিরপুর, তালাইমারী, বাজে কাজলা ও পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দারা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। চরবাসী গবাদি পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন, ফলে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই আত্মীয়ের বাড়ি বা ভাড়া বাসায় উঠছেন।

রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর জানান, আগামী দুই দিন পদ্মার পানি আরও বাড়তে পারে। পানি বিপৎসীমার এক মিটার নিচে এলেই সতর্কতা জারি করা হয়। ইতিমধ্যে পদ্মার টি-বাঁধে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ ১২ জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার এবং রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পরিস্থিতি নিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।গতকাল বুধবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রংপুর বিভাগে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমোর নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এ নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, অপরদিকে ধরলা ও দুধকুমোর নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার ওই নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। 

এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার পদ্মা নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, লুবাছড়া, ঝালুখালী নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।আগামী ২৪ ঘণ্টায় সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলেও তুলে ধরেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ ছাড়া বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার আছে বলে তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী তিন দিন এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।