- কিট আসতে সময় লাগবে দুই মাস
- বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বেশি দাম
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোগের ভরা মৌসুম চলছে। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলবে মৌসুম। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ রোগ পরীক্ষার কিট পৌঁছাতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে তিন মাস। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভরা মৌসুমেও কিট না থাকার কারণে বেশি মূল্যে রোগ পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন রোগীরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কিট সংগ্রহের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কিট পেতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ সরকারি হাসপাতাগুলোতে কিট আসতে আসতে মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
পরিসংখ্যান বলছে, জুনের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার প্রকোপ বাড়ে। বর্ষাকালে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার হয় বেশি। এ কারণে এই সময়ে বাড়ে মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মো. মফিজল হক শাহ বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। পরে কমে গেলেও সম্প্রতি আবার বাড়ছে। তবে সব মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় না। এডিস মশা যদি ভাইরাস বহন করে, তখনই সংক্রমণ ঘটে।’
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ২ হাজার ১৫৯ জন চিকুনগুনিয়া ও ১ হাজার ২১৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে এই রোগ শনাক্তের পরীক্ষায় রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। ডেঙ্গুর টেস্ট ফি সরকার নির্ধারণ করেছে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে মাল্টিপ্লেক্স পিসিআর (ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা) টেস্টে গুনতে হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু চিকুনগুনিয়ার টেস্টেও খরচ পড়ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।
শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির ম্যানেজার পুলক পারিয়াল বলেন, ‘আমরা মাল্টিপ্লেক্স পিসিআরে ৪ হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছি। শুধু চিকুনগুনিয়ার টেস্টে নিচ্ছি ১ হাজার ৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সিএফও আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা মাল্টিপ্লেক্স পিসিআর টেস্টে ৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং শুধু চিকুনগুনিয়া টেস্টে ১ হাজার ৭০০ টাকা নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রোগীর স্বার্থ না দেখে নিজেদের লাভের জন্য কম্বো প্যাকেজ করেছে। স্বাস্থ্য পরিচালকের উচিত রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায্য ব্যয় নির্ধারণ করা। যেহেতু ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি, ফলে প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে তারা রোগীকে কম্বো প্যাকেজ ধরিয়ে দিয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ডেঙ্গুর পাশাপাশি হঠাৎ চিকুনগুনিয়া বেড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ কিটের প্রয়োজন। হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ টেন্ডারের মাধ্যমে কিট আনবে। সরাসরি ক্রয় করলে ২১ দিন, আর টেন্ডারের মাধ্যমে আনতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। তবে আমরা আশা করছি, দুই মাসের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।’ একই সাথে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মাল্টিপ্লেক্স পিসিআর টেস্টে সাড়ে চার হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।