- আ.লীগের ৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৬৪ শতাংশ
সাবেক সংসদ সদস্য ও ফুটবল খেলোয়াড় আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২২ কোটি টাকা আয়কর ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। কর ফাঁকি তথ্য স্বীকার করে গত আগস্ট মাসে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করেন। সালাম মুর্শেদী ছাড়াও তার স্ত্রী শারমিন সালাম, ছেলে ইশমাম সালাম ও মেয়ে শেহরিন সালামের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।
বাকি টাকা পরিশোধ না করায় সম্প্রতি সালাম মুর্শেদির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এই তদন্ত সংস্থা। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী।
আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মোট ২২ কোটি টাকা কর ফাঁকি। তার মধ্যে ৩ কোটি টাকা সম্প্রতি দিয়েছেন। ব্যাংকে এফডিআর করা টাকা তিনি রিটার্নে না দেখিয়ে গোপন করেন।’
কমিশনার জানিয়েছেন, তার আয়কর নথি যাচাইয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ এফডিআর পাওয়া গেছে, যা তিনি রিটার্নে দেখাননি। এই এফডিআরের কোনো বৈধ আয় তিনি দেখাতে পারেননি। ফলে এফডিআরের সেই টাকার ওপর জরিমানাসহ প্রায় ২২ কোটি টাকার কর ফাঁকি পাওয়া গেছে।
আয়কর গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বাফুফের সাবেক এই সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সরকার বদলের পরে ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে খুলনা-৪ থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীর আয়কর ফাঁকি তদন্ত শুরু করে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।
ব্যাংকের তথ্য, আয়করসংক্রান্ত নথি যাচাই শেষে প্রায় ২২ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পরে এই করদাতা ফাঁকি স্বীকার করে ফাঁকি দেওয়া ২২ কোটি টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বাকি থাকা কর পরিশোধ করার অঙ্গীকার করেও তিনি পরিশোধ করেননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক এই তুখোড় ফুটবলার সালাম মুর্শেদীর ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। এ ছাড়া সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয়কর ফাইলও তদন্ত করবে এই ইউনিটের কর্মকর্তারা।
তুখোড় ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী ফুটবলের মাঠ ছেড়ে হয়ে যান পাকা ব্যবসায়ী। সম্পদশালী হয়ে নাম লেখান রাজনীতিতে। তবে সাফল্যের বল জালে ঢোকাতে প্রতি ক্ষেত্রেই করেছেন ফাউল। তিনি যেখানেই গেছেন, কৌশলে শীর্ষ পদ বাগিয়েছেন। জড়িয়েছেন একের পর এক কেলেঙ্কারিতে। ব্যবসা ও সম্পদ বাড়াতে ব্যবহার করেছেন সংসদ সদস্যপদ।
আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে তার ব্যক্তিগত বৈধ সম্পদই বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। তবে অবৈধ সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) আর্থিক অনিয়মের দায়ে ফিফার শাস্তি ও গুলশানের বাড়ি নিয়ে তেলেসমাতির মতো একের পর এক অপকর্ম করেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
সালাম মুর্শেদীর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সালাম মুর্শেদী ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে ৭৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। তদন্তের আওতায় রয়েছে তার স্ত্রী শারমিন সালাম, মেয়ে শেহরিন সালাম, পুত্র ইশমাম সালাম। দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নথি জালিয়াতির মাধ্যমে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর, অনুমতি ও নামজারি করে গুলশান-২ আবাসিক এলাকার ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বরে ২৭ কাঠা সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। এই ঘটনায় জড়িত রাজউক কর্মকর্তাদের আসামি করা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সালাম মুর্শেদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আসামি তালিকার বাইরে ছিলেন।
প্রথম অবস্থায় ক্ষমতার জোরে বেঁচে গেলেও তদন্ত পর্যায়ে আসামি করা হয় সালাম মুর্শেদীকে। সেই সঙ্গে আসামির তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ওই সম্পত্তি দখল করা অপর অংশীদার ইফফাত হক ও তার স্বামী মোহাম্মদ আব্দুল মঈন। এ দম্পতি ২৭ কাঠার মধ্যে ১২ কাঠা দখল করেছিলেন। বাকি ১৫ কাঠা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেন সালাম মুর্শেদী। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই মামলাটি তদন্ত করেন।
দুদকের একজন সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে সরকারি বাড়ি দখল ছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সালাম মুর্শেদী ও তার স্ত্রী, সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন