মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট সেন্ট্রালের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার মুখোমুখি মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ১০ম স্থানে রয়েছে। দেশে ৫৭ মিলিয়ন মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ ৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এমন তাপমাত্রা সহ্য করেছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ৩০ দিন এই ঝুঁকিপূর্ণ গরমের সম্মুখীন হয়েছে। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর মধ্যে দশম স্থানে রয়েছে, যেখানে ৫২ দিন তাপমাত্রা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্তত দ্বিগুণ বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ক্লাইমেট সেন্ট্রাল বাংলাদেশের তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর বিস্তারিত চিত্রও তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, রংপুরে গড়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা, ৩৭ দিন ঝুঁকিপূর্ণ গরম, যার মধ্যে ২৪ দিন সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকায় ৫২ দিন তাপমাত্রা দ্বিগুণ সম্ভাবনাময়, ২৩ দিন ঝুঁকিপূর্ণ গরম, যার ১৫ দিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। চট্টগ্রামে দেশে সর্বোচ্চ ৫৯ দিন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা গেছে। খুলনা, রাজশাহী ও গাজীপুরে প্রতি শহরেই দুই অঙ্কের সংখ্যায় ঝুঁকিপূর্ণ গরমের দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহের বৈশ্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই মৌসুমে প্রতিদিন বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের একজন বা অন্তত ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র প্রভাবিত তাপমাত্রার মুখোমুখি হয়েছে। প্রায় ৯৫৫ মিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ৩০ দিনেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গরম সহ্য করেছে। মোট ১৮৩টি দেশের মানুষ অন্তত ৩০ দিন এমন তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্তত দ্বিগুণ সম্ভাবনাময় ছিল। ইউরোপ ও এশিয়ায় সবচেয়ে অস্বাভাবিক গরম রেকর্ড করা হয়েছে।
ক্লাইমেট সেন্ট্রালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্রিস্টিনা ডাহল বলেন, এই বিশ্লেষণ নিশ্চিত করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আর ভবিষ্যতের হুমকি নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতা। অস্বাভাবিক গরম ইতিমধ্যে মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কার্বন নিঃসারণ কমাতে দেরি মানে আরও বেশি মানুষ, অর্থনীতি ও প্রকৃতি ক্ষতির মুখে পড়বে বলেও জানানো হয়।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘায়িত গরম এরই মধ্যে চরম আবহাওয়া সৃষ্টি করেছে: ইউরোপে রেকর্ডভিত্তিক ভয়াবহ বন অগ্নিকা-, কানাডায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকা-ের বছর এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বন্যা। এমনকি শীতল দেশ হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ড ও নরওয়েতেও টানা কয়েক দিন রেকর্ড ভঙ্গ তাপমাত্রা দেখা গেছে। এই দীর্ঘায়িত গরম সারা বিশ্বে বিপর্যয়কর অগ্নিকা- ও বন্যার মতো দুর্যোগকে আরও তীব্র করেছে।