গ্যাসের দাম বাড়লেও সারের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পাশাপাশি সার সিন্ডিকেট ভাঙতে নীতিমালা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষিজমি সংরক্ষণে কঠোর বিধান রেখে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়নের কাজ চলছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য, অর্জন ও সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে ৮৮ লাখ ৫৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে সার, বীজ, চারা এবং অন্যান্য সহায়তা বাবদ ৮৯৩ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আমন ১৬৫.১৪৫ লাখ টন (চাল), আউশ ২৭.৯৩৪ লাখ টন (চাল), বোরো ২২৬.৮২ লাখ টন (চাল), মোট ধান (চাল) ৪১৯.১৬১ লাখ টন, আলু ১১৫.৭৩৬ লাখ টন, গম ১০.৪১১ লাখ টন, ভুট্টা ৭৩.৯৯৪ লাখ টন, পেঁয়াজ ৪৪.৪৮৭ লাখ টন, রসুন ৭.৮৮৭ লাখ টন, আদা ২.৫১৪ লাখ টন, কাঁচা মরিচ ১৬.৪২৮ লাখ টন উৎপাদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে বিনা মূল্যে ৩০ হাজার টন সারপ্রাপ্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সার আমদানির সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় সরকারের ২৩৩.৬১ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’ হালনাগাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাটকলের অব্যবহৃত গুদামকে সার মজুতের জন্য ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কপোরেশন বিএডিসিকে সার ক্রয়ে ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বালাইনাশক বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। গত এক বছরে ২,৬৪৬.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৩টি পরিমার্জন ও ২টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শাকসবজি সংরক্ষণে ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করা হচ্ছে। পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণের জন্য এয়ারফ্লো মেশিন ও বিশেষ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
আলুর দাম হিমাগার গেট পর্যায়ে সর্বনি¤œ ২২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন আলু ক্রয় করা হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি, চীনে প্রথমবারের মতো আম রপ্তানি, চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার ৫১ টন আলু রপ্তানি এবং গাবতলীতে রপ্তানির জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ফল ও সবজি চাষে উন্নত কৃষি চর্চা (জিএপি) অনুসরণ করা হচ্ছে। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেগুন, বরবটি, লাউ, পটোল, কাঁচা পেঁপে, আলু, বাঁধাকপি, চিচিঙ্গা, করলা, কচুর লতি, আনারস ও জারা লেবুÑ এই ১৫টি ফসলের জিএপি প্রোটোকল চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি যোগ করেন, দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা চলতি বছরের ৫ জুন গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।