মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিকে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেনÑ মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫০), ওয়াহিদুজ্জামান (৫২), মো. গোলাম সারওয়ার আজাদ (৫১), মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির (৪৯), রাজীব সরদার (৩৭) এবং উজ্জ্বল কুমার সাধু (৩৮)।
গতকাল বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এক মার্কিন নাগরিক প্রতারণার শিকার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ডিইআইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ওরফে ডেবির সঙ্গে প্রতারকচক্র বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে সখ্য গড়ে তোলে। পরে নিজেদের ডিইআইয়ের পরিচয় দিয়ে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করে।
অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে জোর করে ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠাতে বাধ্য করে। পরে বাংলাদেশে থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নেয়।
সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযুক্তরা আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছিল। এসব অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টেও অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
সোনা চোরাচালান চক্র:
তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, এই চক্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত যাত্রী ও ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ভাঙারি সোনা সংগ্রহ করত। পরে সেগুলো গলিয়ে বার তৈরি করে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করত।
৬০৮ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং:
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রতারণা, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে অভিযুক্তরা প্রায় ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি লেনদেন করেছে। এই টাকায় তারা ভোগবিলাসে মত্ত হয়েছে এবং নামে-বেনামে সম্পত্তি গড়ে তুলেছে।
ঘটনার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা (নং-২৪) দায়ের করা হয়। সিআইডি বলছে, মামলার পূর্ণ রহস্য উদঘাটন, অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের শনাক্ত এবং সবাইকে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।