গণমাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চোখ এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের ভোটকক্ষে প্রবেশে অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটকক্ষে একসঙ্গে কতজন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন, সে বিষয়ে ছাড় দেওয়া উচিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ইসির নীতিমালা স্বাধীন সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গতকাল শনিবার ‘নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সহযোগিতায় একটি জাতীয় দৈনিকের সভাকক্ষে সভাটির আয়োজন করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নীতিমালায় ছোট ছোট সংস্কার আনা দরকার। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারের নয়। ইসি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়, যতটুকু সম্ভব উদার হতে হবে। অ্যাক্রিডিটেশন (সাংবাদিক কার্ড) দেওয়ার পর ভোটকক্ষে প্রবেশে কোনো বাধা দেওয়া উচিত নয়। কতক্ষণ থাকবেন, সেটাতেও বাধা দেওয়া উচিত নয়। ভোটকক্ষে যেতে পারমিশনের বিধান থাকা উচিত নয়। এটা বাদ দেওয়া উচিত।
কিন্তু গোপন কক্ষে যেতে পারবেন না। কক্ষে দুজনের বেশি যেতে পারবেন না, এটা আমাদের সময়ও ছিলÑ এমন মন্তব্য করে সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা করা হয়েছিল, কারণ আমাদের কক্ষ তো এত বড় না। সেখানে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের এজেন্ট থাকেন, তার ওপর বেশিসংখ্যক সাংবাদিক প্রবেশ করলে জায়গা হবে না। তখন ভোটগ্রহণে অসুবিধা হয়। তবে কক্ষে দুজনের বেশি প্রবেশে মানা করেছে ইসি, সেটা এখন কনসিডার করা উচিত। প্রকৃত ভোটার ভোট দিচ্ছে কি না, অনিয়ম হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। আমরা টিভিতে লাইভ দেখে ব্যবস্থা নিতাম। নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোটের সময় আমরা টিভিতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ইসির প্রতি অনুরোধ, সাংবদিকদের সঙ্গে বসুন। এমন কিছু নেই যে আলোচনা করে সমাধান বের করা যায় না। এখনো সময় আছে, বসুন। মেইক ইট ট্রান্সপারেন্ট। লাইভ টেলিকাস্ট করতে দেন। ইসি বলছে, শতাব্দীর সেরা নির্বাচন করবে। তাহলে ইসির চোখ অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। কেন্দ্রে প্রবেশের পর ভোটকক্ষে প্রবেশে অনুমতি নিতে হবে, তার প্রয়োজন নেই। এ জন্য অবশ্যই মিডিয়ার সহায়তা নিতে হবে। কারণ মিডিয়াই হচ্ছে তাদের চোখ। দুধের মধ্যে যদি এক ফোঁটা চুনা পড়ে, তাহলে সেই চুনা তুলে দুধ বিক্রি করা যায় না। তেমনি একটাও যদি জাল ভোট পড়ে, রি-ইলেকশন করতে হবে।
এ সময় বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে সাংবাদিকদের ভোটকক্ষে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। যদি অবহিত করে প্রবেশ করতে হয়, তাহলে আমাকে কেন নির্বাচনী কার্ড দিচ্ছে ইসি? আবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজেই যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে কি তিনি অনুমতি দেবেন? আবার শত শত মিডিয়ার অনুমতির জন্য কথা বলতে গেলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার কাজ কীভাবে করবেন? কাজেই এ নীতিমালা কোনো অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত নয়। আমি মনে করি, স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই আদেশ একেবারে সাংঘর্ষিক। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
বড় জেলায় ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শ:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় জেলাগুলোতে প্রশাসনের লোকবলের পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনে কোনো বাধা না থাকলেও সংসদ নির্বাচনে কেবল প্রশাসনের কর্মকর্তা তথা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অংশীজনেরা দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে দাবি তুলে আসছেন। তবে বর্তমানে সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ইসি কর্মকর্তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নীতিমালা সাংবাদিকদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক :
ভোটকক্ষে সাংবাদিকদের নির্দিষ্ট সময়ের উপস্থিতিসংশ্লিষ্ট নীতিমালার বিষয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ভোটকক্ষে প্রবেশের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, একজন সাংবাদিক ১০ মিনিটের বেশি কক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। আমার প্রশ্ন হলো, ১০ মিনিট কেন? ওখানে যদি কারচুপি হয়, সাংবাদিকেরা গেলেন, ১০ মিনিট কারচুপিটা বন্ধ থাকল। ১০ মিনিট কারচুপিটা হলো না। সাংবাদিকেরা চলে আসার পর আবার যে কারচুপি হবে না, এর নিশ্চয়তা কী? তাহলে সঠিক তথ্য জাতি কীভাবে জানবে, নির্বাচন কমিশন কীভাবে জানবে?
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে এবং বিজেসির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসচিব ও আরটিভির হেড অব নিউজ ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীন (জেবেল), সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন