- ফাঁদ, বিষ ও ওষুধেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না
- অন্তত ২২ ইউনিয়নের ৬৭ গ্রাম ক্ষতির মুখে
- কৃষকেরা বলছেন, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা
গাইবান্ধার সাত উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর আমন ধানে ইঁদুরের আক্রমণে কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ওষুধ, ফাঁদ ও বিষ ট্যাবলেট ব্যবহার করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। মাঠের পর মাঠ ধানের গোড়া কেটে ফেলছে ইঁদুর, এতে অনেক জায়গায় ফসলের বড় অংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার সাত উপজেলায় মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জে ৩০ হাজার ৮৫ হেক্টর, সাঘাটায় ১৪ হাজার ৩২৫, ফুলছড়িতে ৭ হাজার ৯৫০, সাদুল্লাপুরে ১৬ হাজার ৩৩০, পলাশবাড়িতে ১৩ হাজার ৮১০, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ৭০০ এবং সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক ইঁদুরের আক্রমণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙা, সর্বানন্দ, চর বেলকা, ধোপাডাঙা, কছিমবাজার, পাঁচপীর, শ্রীপুরসহ তিস্তা নদীর চরাঞ্চলজুড়ে ইঁদুরের দাপটে কৃষকের ঘুম হারাম। একই চিত্র সাঘাটা, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদরে। অন্তত ২২ ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামে ইঁদুরের আক্রমণে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙা গ্রামের কৃষক সুজা মিয়া বলেন, ‘এবার মাজরা পোকা আর গোড়া পচন সামলে উঠেছি, কিন্তু ইঁদুরের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে পারছি না। বিষ ট্যাবলেট, ফাঁদ-সব চেষ্টা ব্যর্থ। কৃষি অফিসে গিয়েছিলাম, কিন্তু সমাধান পাইনি। এখন নিজেরাই আইলে ফাঁদ তৈরি করছি।’
সুন্দরগঞ্জের বেলাল হোসেন জানান, ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ‘এখন ইঁদুরের কারণে গোড়া কেটে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুদের টাকা কীভাবে শোধ দেব বুঝতে পারছি না,’ বলেন তিনি।
ফুলছড়ির ভাষারপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলী বলেন, ‘ধান ভালোই হয়েছিল, কিন্তু ইঁদুরে সব নষ্ট করে ফেলছে। সারাদিন জমির পাশে ঘুরে শব্দ করি, যাতে ইঁদুর না আসে। আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কিছু করার নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সচেতন করছি ও পরামর্শ দিচ্ছি। ইঁদুর দমনে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহারের দিকেও কাজ চলছে।’
কৃষকরা বলছেন, এবার বন্যা না হওয়ায় ধানের ফলন ভালো হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে ইঁদুরের এমন আক্রমণে সেই আশা এখন হতাশায় পরিণত হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন