বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:২০ পিএম

প্রতিবন্ধী নারীর ভাতা প্রধান শিক্ষকের পকেটে, এলাকায় তোলপাড়

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:২০ পিএম

প্রতিবন্ধী নারী মোসা মুক্তা। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিবন্ধী নারী মোসা মুক্তা। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মানবিক সমাজে অমানবিকতার এমন নির্মম দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়। প্রায় আড়াই বছর ধরে এক অসহায় প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছেন এলাকারই এক প্রধান শিক্ষক।

বিষয়টি জানাজানির পর বদলগাছীর গ্রাম-মহল্লা থেকে চায়ের দোকান সবখানেই চলছে ক্ষোভের ঝড়। যে শিক্ষক নৈতিকতা শেখাবেন, যিনি নতুন প্রজন্মের হাতে মানবতার আলো তুলে দেবেন, তার হাতেই জ্বলেছে অনিয়মের কালো দাগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পাঁচঘরিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী মোসা মুক্তা (৪০) প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য স্থানীয় মহিলা সদস্য তহমিনার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন।

মহিলা সদস্য তহমিনা ও তার স্বামী, পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, ২০২৩ সালের ১ জুলাই তার নামে ভাতার কার্ড করে দেন। কিন্তু সেখানে ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর না দিয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তার নম্বর বসিয়ে দেন। এরপর থেকেই নিয়মিত ভাতা তুলেছেন ওই প্রধান শিক্ষক।

ভাতাভোগী মোসা মুক্তাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি, টাকা দেওয়া হয়নি। প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রতি মাসেই টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি, অথচ প্রকৃত ভাতাভোগী ছিলেন অজানায়।

চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি নতুন ভাতার আবেদন নেওয়ার সময় সমাজসেবা অফিসে গিয়ে মোসা মুক্তা জানতে পারেন, তার নামে আড়াই বছর ধরে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনে তার চোখে-মুখে হতবাক নিস্তব্ধতা দেখা দেয়। পরে এলাকায় শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

মোসা মুক্তা বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে মেম্বার তহমিনা আমার কাগজপত্র নিয়েছিল। বারবার জিজ্ঞেস করলে বলত- হবে। কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি। সম্প্রতি সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি, আমার নামে ভাতা অনেক আগে থেকেই হয়েছে, মোবাইল নম্বরও আমার নয়।’

তিনি আরও জানান, ‘এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মিজানুর মাস্টার আমাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন। কয়েকদিন পর পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর মাস্টার ও মাসুদ মেম্বার ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু আড়াই বছরের ভাতার বাকি টাকা প্রায় ৩০ হাজার টাকা কেন দিলেন না?’

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এক প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা আত্মসাৎ কোনো সাধারণ অন্যায় নয়। এটি তার বেঁচে থাকার আশাকে চুরি করা।’

আরেক বাসিন্দা নুরুল হোসেন বলেন, ‘যে শিক্ষক তার ছাত্রদের মানুষ তৈরি করবেন, তিনিই যদি এমন করেন তাহলে সমাজ কোথায় যাবে।’

প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানকে মুঠোফোনে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, ‘মুঠোফোনে কিছু বলা যাবে না, সাক্ষাতে কথা বলব।’ পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

অপরদিকে মহিলা সদস্য তহমিনা দাবি করেন, ‘ভুলবশত এমন হয়েছে। এখন সংশোধন হয়েছে। আমার স্বামী মুক্তার সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।’

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বলেন, ‘এটি স্পষ্ট অনিয়ম। আমরা মোবাইল নম্বর সংশোধন করেছি। আবেদনকারীকে নিজের নম্বর ব্যবহারের পরামর্শ সবসময় দেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি জানান, ‘এ বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি সত্য হয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এলাকাবাসী মনে করছেন, একজন শিক্ষক তিন বছর ধরে ভাতা তুলে থাকলে এমন ঘটনা আরও থাকতে পারে। তদন্ত শুরু হলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে পারে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!