বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:০৬ পিএম

হারানো ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী কাকিনা জমিদার বাড়ি

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:০৬ পিএম

ঐতিহাসিক কাকিনা জমিদার বাড়ি। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঐতিহাসিক কাকিনা জমিদার বাড়ি। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক কাকিনা জমিদার বাড়িটি আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসপ্রায় এক নিদর্শনে। শত বছরের পুরনো এই রাজবাড়ি একসময় ছিল ঐশ্বর্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে সেটি পড়ে আছে অবহেলা ও অযত্নে, হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়।

স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, কাকিনা একটি সুপ্রাচীন ও ইতিহাস খ্যাত জনপদ। তদানীন্তন ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তের সভ্যতার যে সুপ্রাচীন লীলাভূমি গড়ে উঠেছিল, তারই একটি অংশ ছিল কাকিনা। আজকের কাকিনা নামটি অতীতে কংকনা, কংকানিয়া, কানকিনা, কৈকিনা বা কাকিনিয়া ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল।

প্রায় তিনশত বছর আগে মোগল সম্রাটের দেওয়া সনদের মাধ্যমে কাকিনায় জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার কাশীনাথ রায় ছিলেন এ পরিবারের প্রথম প্রভাবশালী নেতা। তিনি কৃষি, বাণিজ্য ও স্থাপত্যে অবদান রাখেন এবং কাকিনা অঞ্চলে একটি সুসংগঠিত প্রশাসন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে জমিদার মহিমা রঞ্জন রায় ও শম্ভুচরণ রায় জমিদারির পরিধি বৃদ্ধি করেন।

কাকিনা জমিদার বাড়িটি ইউরোপীয় ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে গড়ে তোলা হয়েছিল। দোতলা বিশাল প্রাসাদ, রাজদরবার, অতিথিশালা, হাওয়াখানা ও গোপন আস্তানার নকশা এখনও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। একসময় এ রাজবাড়িতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো নাটক, যাত্রা, পুতুলনাচ ও সাংস্কৃতিক আসর, যা কাকিনাকে উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় কাকিনা রাজবাড়ির ঐশ্বর্য। ১৯২৫ সালের দিকে আর্থিক সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে জমিদারি নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর বাড়িটি অবহেলা ও প্রাকৃতিক ক্ষয়ের শিকার হয়ে বর্তমানে ধ্বংসের মুখে।

কাকিনার মহিমাকে আরও বিস্তৃত করেছিলেন রাজা মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী। তিনি রংপুরে ‘বঙ্গ বিদ্যালয়’ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ‘কাইলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে রূপান্তরিত হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। তার সময়ে কাকিনা জমিদারিতে মহিমাগঞ্জ, তিস্তা, মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাট, আদিতমারী, মোগলহাট ও কাকিনা রেলস্টেশন স্থাপিত হয়। এছাড়া তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ও থিয়েটার হল নির্মাণের জন্য জমি দান করেছিলেন।

রাজবাড়ির অধিকাংশ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কোথাও ছাদ ধসে পড়েছে, কোথাও দেয়াল ফেটে গেছে। প্রাসাদ, অতিথিশালা, রাজদরবার ও গোপন কক্ষগুলো ভগ্নদশায় পড়ে আছে। কাকিনা জমিদারির সবকিছুই আজ কেবল স্মৃতি।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উত্তর বাংলা কলেজ। পাশেই রয়েছে রাজার স্মৃতি বিজড়িত কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া আছে কাকিনা জনমিলন কেন্দ্র, কাকিনা মিশন হাউস, কাকিনা কাচারি ঘর এবং হাওয়া খানা।

স্থানীয় সচেতন মহল দাবি করছে, সরকারি উদ্যোগে বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হোক। তাদের মতে, যদি এই রাজবাড়িটি সংরক্ষিত হয়, লালমনিরহাটে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!