ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন শিশির মনির

তত্ত্বাবধায়ক ফিরলেও এবারের নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

তিনি বলেন, সংসদ ভাঙার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধান ছিল। এখন তো সে রকম পরিস্থিতি নেই। বর্তমানে সংসদও নেই, তাই সেটি ভাঙারও সুযোগ নেই। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োগও এখন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল সংক্রান্ত চূড়ান্ত আপিল শুনানির চতুর্থ দিনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, আমরা বলেছি, আপিল মঞ্জুর করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা উচিত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে এটি পুনর্জীবিত হলেও বাস্তবে তা এখনই কার্যকর করা সম্ভব নয়। কারণ সংবিধানের আগের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটিকে যে প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়া এখন আর বিদ্যমান নেই।

শিশির মনির মনে করেন, সংসদ না থাকলে ভাঙারও প্রশ্ন আসে না। সংসদ ভাঙার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংসদ ভেঙে গেছে এক বছরেরও বেশি সময় আগে। বর্তমানে দেশ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের তিনটি ম্যান্ডেট: বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। সেই ধারাবাহিকতায়ই আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নতুন সংসদ গঠিত হলে, তাদের সিদ্ধান্তে আগের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি পুনর্বহাল বা জুলাই সনদের মেকানিজম অনুসারে নতুন কাঠামো গঠন করা যেতে পারে।

শিশির মনির আর বলেন, আমরা চাই, আদালতের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসুক। তবে কোনো পর্যবেক্ষণ নয়। আগামী নির্বাচনটি ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোনো কার্যকর আইন বা সাংবিধানিক সুযোগ নেই।

এর আগে গত সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ইস্যুতে তিন দিন ধরে শুনানি করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূইয়া ও ইন্টারভেনার হিসেবে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। বৃহস্পতিবার অ্যাডভোকেট শিশির মনিরও জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন। এর আগে, গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ রিটটি খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।

এর বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করা হলে, আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করা হয় এবং ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তিÑ তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৬ অক্টোবর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২৩ অক্টোবর পৃথকভাবে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। নওগাঁর রানীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও গত বছর আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।