দিনের বেলায় হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সন্ধ্যা নামতেই যেন অন্য এক চিত্র ধারণ করে। ঢেউয়ের গর্জন আর পর্যটকের হাসি-উল্লাসে উৎসবমুখর এই দীর্ঘতম বালুকাবেলা রাত নামলেই ঢেকে যায় গা’ ছমছম অন্ধকারে। ঝাউবাগান ও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট থাকার সুযোগ নেয় ছিনতাইকারী, ইভটিজারসহ নানা অপরাধীরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে নিরাপদ পর্যটন পরিবেশ, কমছে পর্যটকের বিশ^াস ও আগ্রহ।
হোটেল-মোটেল জোনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ আলোকবাতি নষ্ট। বিশেষ করে কবিতা চত্বর থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় অপরাধপ্রবণতা বেড়ে গেছে।
পর্যটকদের অভিযোগ, আলো স্বল্পতার সুযোগে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। রাতে ঘোরাফেরায় ভর করছে ভয় ও অনিরাপত্তা। ভ্রমণপিপাসুরা জানান, রাতে অন্ধকার থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া রিস্কি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে এক পর্যটককে ছুরিকাঘাতে আহত করে মোবাইল ফোন ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। পরে এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার ও ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আলো না থাকায় রাতে বাজার ফাঁকা হয়ে যায়, বিক্রি হয় কম। সাগরপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, নিরাপত্তাহীনতার কারণে পর্যটকরা রাতে বের হন না। এতে ব্যবসা সংকটে পড়ে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। নষ্ট আলো সম্পর্কে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও পাওয়া গেছে।’
এদিকে, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় আলোচিত সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম। তার ভাষায়, ‘যেসব স্থানে নতুন আলোর প্রয়োজন, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুতই মেরামত ও নতুন লাইট স্থাপনের কাজ শুরু হবে।’
অপরদিকে কক্সবাজার সাগর পাড়ে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজের জেনারেল ম্যানেজার ইয়াকুব আলী জানান, পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তার অভাবে রাতের সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার, ঝুঁকিতে পড়ছে পর্যটন অর্থনীতি। বিশেষত গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সমস্যাটি আরও প্রকট হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
তিনি আরও জানান, ২৪ ঘণ্টা আলো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। নইলে পর্যটন ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।

