ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

শয্যাশায়ী মায়ের একমাত্র ভরসা প্রতিবন্ধী মেয়ে

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০২:০৩ এএম

অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন রাশেদা বেগম। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে অসুস্থ, পঙ্গু মাকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। পানি এনে গোসল করান, আবার ঘরে নিয়ে গিয়ে কাপড় পরিয়ে দেন, মুখে ভাত তুলে দেন। এভাবেই প্রতিদিন মায়ের সেবা করেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রাশেদা বেগম (১৮)। তাদের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ রানীগাঁও গ্রামের পূর্বপাড়ায়।

জনপ্রতিনিধি ও পরিবারটির আত্মীয়স্বজন সূত্রে জানা গেছে, হাজেরা বেগম (৫৫) দুই বছর ধরে চিকিৎসার অভাবে শয্যাশায়ী। স্বামী হোসেন আলীর মৃত্যু হয় ১৫ বছর আগে। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে চরম দুঃসময় শুরু হয় হাজেরার। প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলত। বড় ছেলে আমির হামজা বড় হয়ে অন্যত্র চলে যায়। ছোট মেয়ে রাশেদা ১০ বছর গাজীপুরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে বাড়ি ফিরে আসে। প্রাপ্য মজুরির ৮০ হাজার টাকায় ৫ শতক জমিতে তৈরি হয় একটি দোচালা টিনের ঘর। ঘরের আসবাব বলতে একটি ভাঙা চৌকি। এই চৌকিতেই মা-মেয়ের রাত কাটে।

রাশেদার জীবনও আটকে যায় তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধকতার কারণে। ২০২২ সালে তার বিয়ে হলেও তিন মাসের মাথায় সংসার ভেঙে যায়। সেই বছরই হাজেরা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় একবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, পুষ্টিহীনতায় তার শরীরের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হলেও টাকার অভাবে আর সম্ভব হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি বিনা চিকিৎসায় শয্যাশায়ী। এখন ঠিকমতো কথা বলতেও পারেন না।

দক্ষিণ রানীগাঁও গ্রামের পূর্বপাড়ার এই অসহায় মা-মেয়ের সংসার চলে রাশেদার উপার্জনের ওপর। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে চাল-ডাল মেলে, তা দিয়েই চলে খাওয়া। কাজ না পেলে না খেয়ে রাত কাটে তাদের।

বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, পরিবার বলতে এই মা-মেয়েকেই বোঝায়। একটা ছেলে আছে, কিন্তু মায়ের কোনো খোঁজখবর রাখে না। অসুস্থ ওই নারীকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কিছু পাওয়ার মতো সুযোগ এলে আমরা সহায়তার চেষ্টা করি। এদের জীবনে কষ্টের শেষ নেই।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারটির পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য একটি আবেদন পেলে ভালো হতো। তবুও অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা সহায়তা ও মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।