হারিয়ে যেতে বসা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য, জৌলুশ, সংস্কৃতি রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ। আর সেসব ছবি নিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গুলশান শাখায় শুরু হয়েছে এই শিল্পীর ‘সিটি অব মেমোরিস’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনী।
গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীতে শিল্পীর ১৪০টি মিনিয়েচার চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, যা তার সাম্প্রতিক শিল্পভাবনা ও অভিব্যক্তির স্বতন্ত্র রূপ দর্শকদের সামনে উন্মোচিত করবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রদর্শনীটি চলবে চলতি মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের জন্য বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রদর্শনী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুরান ঢাকা, যার ইতিহাস মুঘল আমল থেকে প্রোথিত, এক সময় বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং নগরজীবনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। এখনো এই এলাকার সংকীর্ণ গলি, যৌথ প্রাঙ্গণ ও পারস্পরিক সহাবস্থানের ঐতিহ্য নগরবাসীর এক আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ জীবনপ্রবাহের সাক্ষ্য বহন করে।’
‘বহু প্রজন্মের মানুষের স্মৃতি, গল্প ও অভিজ্ঞতা এখানে পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তবুও সময়ের প্রবাহে এই ঐতিহাসিক নগর নিজের রূপ হারাতে বসেছে। আধুনিকতার স্রোতে তথাকথিত ‘উন্নয়নের’ নামে পুরান ঢাকার পুরোনো বসতঘর, শৈল্পিক অলংকরণযুক্ত স্থাপত্য ও নীরব পাড়াগুলো দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে; তাদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে কাচ ও কংক্রিটের বহুতল স্থাপনা। বহু জীবন্ত স্মৃতি এভাবে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে।’
মুঘল মিনিয়েচার চিত্রকলার সূক্ষ্ম বর্ণনাশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ তার সৃষ্টিতে এই হারিয়ে যেতে থাকা জগতকে পুনরায় নির্মাণ করেন। রঙের সূক্ষ্ম স্তর, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্য উপাদানের ইঙ্গিত এবং ক্ষণস্থায়ী মানবপ্রকৃতির চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে শিল্পী তুলে ধরেন ক্ষয়ের পাশাপাশি টিকে থাকা পরিচয়বোধ, স্থিতিস্থাপকতা এবং পুরান ঢাকার অনন্য সম্প্রদায়-সংলগ্নতা।
১৯৮৭ সালে প্রথম প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদের শিল্পজীবনের সূচনা। তিনি দেশ-বিদেশে বহু দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৩০টি একক প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইরান এবং যুগোস্লাভিয়ায় ছবির প্রদর্শনী করেছেন কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ-মার্ক সেরে-শারলে। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে চিলির কনসাল আসিফ এ. চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন