৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন পরীক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-ঢাকা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরীক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে শাহবাগে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টির পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষার্থীদের দাবি, সাধারণত লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে ৬ মাস সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এবার মাত্র দুই মাস দেওয়া হয়েছে। তাই তারা ‘যৌক্তিক’ সময় পিছিয়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
শাহবাগে অবস্থান পরীক্ষার্থীদের : ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময় বাড়ানোর দাবিতে গতকাল বিকাল ৩টার পর থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন পরীক্ষার্থীরা। এতে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে পরীক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে জাদুঘরের সামনে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। পরে সেখানেই বসে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার্থীরা বলেন, ২৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলে তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। তাই যৌক্তিক সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে পিএসসির প্রতি আহ্বান জানান তারা। দাবি আদায় না হলে ব্লকেডসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ : একই দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর, নেত্রকোনা, জারিয়া ও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুরগামী আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন লাল কাপড় দেখিয়ে আটকে জব্বারের মোড়ে কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ‘সবাই পায় ছয় মাস, আমরা কেন দুই মাস’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এর আগে গত শনিবার বিকেল ৫টায় একই দাবিতে একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে ঢাকাগামী তিস্তা, মহুয়া এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে গতকাল দেওয়ানগঞ্জগামী যাত্রীবাহী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই আন্দোলনস্থলে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখায় এই ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে কিছু যাত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান। পরে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিকেল আড়াইটার দিকে শুধুমাত্র তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে দিলে ট্রেনটি গন্তব্যে ছেড়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি চলমান রাখে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, বিসিএস পরীক্ষার সময় পুনর্নির্ধারণের দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। এতে ফাতেমানগরে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার, আউলিয়ানগরে তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, গফরগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ জংশনে ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার এবং দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার আটকা আছে।
শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত রেলের চাকা ঘুরবে না। শুধু আমরা নই রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজকে বৃহৎ আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের দাবি রুটিন প্রকাশের অন্তত দুই মাস পর পরীক্ষা হতে হবে। পিএসসি থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. আব্দুল আল মামুন।
রাবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ : গতকাল দুপুর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন এলাকার রেললাইনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাবির শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা- ‘সবাই পায় ছয় মাস, আমরা কেন দুই মাস?’, ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলায়, স্বৈরাচারের ঠাঁই নাই’, ‘৪৭ মারা রোডম্যাপ, বাতিল চাই করতে হবে’, ‘সময় চাই সময় চাই, যৌক্তিক সময় চাই’, ‘আমার ভাই অনশনে পিএসসি কি করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এগ্রোনোমি এন্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আকতার বলেন,‘আমাদের একটাই দাবি, সেটা হলো লিখিত পরীক্ষার সময় পিছিয়ে একটা যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা। আমরা চাই দ্রুত পড়ার ফেরার টেবিলে ফিরে যেতে।’
এর আগে গত শনিবার বিকেল থেকে রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করেন পরীক্ষার্থীরা। এতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের প্রায় ৬ ঘণ্টা রেলযোগাযোগ বন্ধ থাকে।

