কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক উচ্ছেদচেষ্টার প্রতিবাদে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গতকাল রোববার সকাল থেকেই। গতকাল সকাল থেকে কক্সবাজার-খুরুশকুল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন স্থানীয়রা। টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের ফলে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র উত্তেজনা ও যানজট।
স্থানীয়রা জানান, তিন শতাধিক পরিবার বহু বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করে আসলেও বারবার উচ্ছেদের মুখে পড়ছেন। তাদের দাবিÑ বৈধ কাগজপত্র, দলিল, খাজনা রসিদসহ জমির মালিকানার সব নথিই রয়েছে। তা ছাড়া বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা চলমান এবং রয়েছে স্থিতাবস্থা আদেশও। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার বেলা ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও প্রশাসনের একটি দল কস্তুরাঘাট এলাকায় গিয়ে জমির চারদিকে তারকাঁটা দিয়ে ঘেরাও শুরু করে। এ সময় এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে তারা। বাধ্য হয়ে দুপুর ১২টার দিকে উচ্ছেদ দল সরে যায়। বেলা দেড়টার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ, অমানবিক এবং নোটিশবিহীন। দীর্ঘদিনের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের পেছনে অব্যাহত অনিয়ম রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
তারা বলেন, আমাদের সব বৈধ কাগজপত্র আছে। মামলা চলছে, স্টে অর্ডারও রয়েছে। তারপরও বারবার এসে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। এটা কোন আইন?
বিআইডব্লিউটিএ’র ফুড কর্মকর্তা আবদুল ওয়াকিল বলেন, উচ্ছেদ অভিযান বৈধ ছিল। তারা বন্দর নির্মাণের জন্য সীমানা দিতে আসছিল। অবরোধের কারণে কক্সবাজার-খুরুশকুল সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন, বৈধ-অবৈধ জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই জটিল আকার ধারণ করেছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে সামনে আরও বড় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
উকিলপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি অ্যাড মো. ইসমাইল জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার ওয়াকিল আহমদের মোবাইলে কল দিয়ে ওসির মধ্যস্থতার বৈঠক করার অনুরোধ জানালে বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীদের ১০ জন প্রতিনিধি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যান। বৈঠক শেষে বিআইডব্লিউটিএ’র সব কর্মকর্তাসহ নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদর মডেল থানার পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন এবং তাদের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, তারা তো আদালতের আদেশ মানছেন না। কোনো কাগজপত্রও দেখছে না। নিজেদের মতো করে কাজ করছে। এটা করতে দেওয়া হবে না।
ঘটনাস্থলে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুর রহমান জানান, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিলার স্থাপনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

