সোমবার, ০৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাটে দিশাহারা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু হীতে যেন বিপরীত হয়েছে। আগের সরকারের অধিকাংশ প্রকল্প বাদ দেওয়ার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বার্ষিক পরিকল্পনা কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের সর্বশেষ তথ্যমতে, স্বাস্থ্য খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দের ১৬ হাজার ৮৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলসহ বড় হাসপাতালগুলোয় এমআরআই, ইকো ও সিটিস্ক্যানসহ ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ব্যাপক সংকট রয়েছে। মেলে না প্রয়োজনীয় ওষুধ। রোগী ভর্তির সময় পাওয়া যায় না শয্যা। সরকারি হাসপাতালগুলোর যখন এ অবস্থা চলছে, তখন স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের টাকা পড়ে থাকছে সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে। 


প্রতি বছরই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এখনো গ্রামীণ জনপদের বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই, চিকিৎসক অনুপস্থিত, এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। শহরের হাসপাতালগুলোতেও জনবল ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা প্রকট। 
যার ফলে বরাদ্দ বাড়লেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার খুবই কম। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নেওয়া প্রকল্পের গড় বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ। বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়ন হতাশাজনকভাবে নেমে এসেছে ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশে। গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৮৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এডিপির বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়Ñ বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক নির্মাণ, সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিনসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য। কিন্তু গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে ১৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৩ শতাংশেরও কম কাজ হয়েছে।


স্বাস্থ্য খাতে দেশের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি বছর ৮ লাখ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) দেওয়া তথ্যমতে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতির কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেবা নিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে বছরে স্বাস্থ্যসেবায় বিদেশে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা চলে যায়। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এতটাই প্রকট যে, সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জনগণকে নিজেই বহন করতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর পরিকল্পনা ছাড়া এ খাতে উন্নয়ন সম্ভব নয় । স্বাস্থ্য খাত দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর বাজেট বাস্তবায়নের হার সবসময়ই সবচেয়ে খারাপ। কেন তারা বছরের পর বছর খরচ করতে পারছে না, তা সরকারের পর্যালোচনা করা উচিত।’
স্বাস্থ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো একটি কার্যকর, সুসংগঠিত এবং সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বাংলাদেশে সম্প্রতি বছরগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই বরাদ্দের কতটুকু সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে? দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে এই খাতের অনেক সম্ভাবনা অপচয়ের শিকার হচ্ছে।


জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই খাতে প্রতিটি টাকার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। স্বাস্থ্য যদি সমৃদ্ধ জাতির ভিত্তি হয়, তবে সেই ভিত্তিকে মজবুত করতে হলে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, তার সঠিক ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের স্বপ্ন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!