ঢাকা শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক বিভাজন কতটুকু ফলপ্রসূ

সফিউল ইসলাম
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:২২ এএম

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই দেশের জন্মের পেছনেও এক বিরাট রাজনৈতিক আন্দোলন এবং আদর্শগত বিভাজনের অবদান রয়েছে, যা জাতিকে একটি নতুন সত্তায় রূপ দিয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করার পরও আজকের বাংলাদেশ এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে রাজনৈতিক বিভাজন যেন জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে এক গভীর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এই বিভাজন কেবল রাজনৈতিক মতবিরোধেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বিস্তৃত হয়েছে সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি এমনকি পারিবারিক সম্পর্কেও। প্রশ্ন উঠছে, এ বিভাজন কীভাবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে প্রভাবিত করছে? এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, আগামীর বাংলাদেশের নির্মাণে এই বিভাজন আদৌ কোনো ফলপ্রসূতা এনে দিতে পারে কি?

রাজনৈতিক বিভাজন আদিকাল থেকেই সমাজের অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল, যার মাধ্যমে বিভিন্ন আদর্শ, নীতি ও মতবাদ উপস্থাপিত হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা হয়। মতের ভিন্নতা থেকেই উদ্ভব ঘটে তর্কের, তর্ক থেকে আসে যুক্তি, এবং যুক্তির পথ ধরেই চলে সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রযাত্রা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ভিন্নমত একসময় গণতন্ত্রের সহনশীল রূপে উপস্থাপিত হলেও সময়ের ব্যবধানে তা রূপ নিয়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও প্রতিহিংসার এক নির্মম চক্রে। ফলস্বরূপ, রাজনীতি একটি ইতিবাচক চর্চা না থেকে ধীরে ধীরে বিভক্তি, হিংসা ও অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজকের তরুণ সমাজ, যারা আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধান চালিকাশক্তি, তাদের অনেকেই রাজনীতিকে দেখছে একটি নোংরা খেলা হিসেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতার অভাব যেমন প্রকট, তেমনি গণমানুষের চাহিদার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো, যেখানে একসময় রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটত, সেখানে আজ দলীয় দখলদারিত্ব ও সহিংসতা ছাত্রসমাজকে হতাশ করছে। এ অবস্থায় তরুণরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, আর এর প্রভাব পড়ছে নেতৃত্বের মানে, ভবিষ্যৎ গঠনে দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতায়। রাজনৈতিক বিভাজনের একটি বড় পরিণতি হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্যের অভাব। যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য, যেখানে দেশপ্রেম এবং জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দলীয় স্বার্থ এতটাই প্রাধান্য পাচ্ছে যে, একটি সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাও পরবর্তী সরকার আসার পর বাতিল বা অবহেলিত হয়ে পড়ছে, কেবল দলীয় পরিচয় ভিন্ন বলেই। এতে একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ঘটছে, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না। যেমন দেখা যায়, এক সরকারের সময় একটি বড় প্রকল্প শুরু হলেও পরবর্তী সরকার সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এর ফলে জনস্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিভাজন সর্বাংশে অকার্যকর, এমন বলা ঠিক নয়। মতের ভিন্নতা থেকে যদি নতুন চিন্তা, নতুন পথ এবং সৃজনশীল উদ্যোগ বেরিয়ে আসে, তবে সে বিভাজনই সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজনের বাস্তবতা তা নয়। এখানে মতবিরোধকে দমন করার প্রবণতা বেশি, আর ফলত ভিন্নমত এক প্রকার আতঙ্কের সৃষ্টি করে। গঠনমূলক সমালোচনাকে দেখা হয় বিরোধিতা হিসেবে, আর বিরোধিতার শেকড় কেটে ফেলা যেন হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের মাপকাঠি। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সবখানেই এই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। তাই প্রশ্ন ওঠে, আমরা কি এক সহনশীল, যুক্তিনির্ভর ও বহুমত সহন রাষ্ট্রের দিকে এগোচ্ছি, না কি ক্রমাগত সংকীর্ণতায় বন্দি হয়ে পড়ছি? রাজনীতিতে বিভাজনের আরেকটি দিক হলো নেতৃত্বের সংকট।

যখন রাজনৈতিক মঞ্চে যোগ্যতা নয়, বরং দলীয় আনুগত্য, স্বজনপ্রীতি এবং অতীতের শত্রুতা বিজয়ী হয়, তখন দেশ পায় না প্রয়োজনীয় মেধাবী নেতৃত্ব। ফলে প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণে যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার, তা অনুপস্থিত থেকে যায়। একদলীয় আধিপত্য কিংবা দীর্ঘদিন একমাত্রিক শাসন কাঠামো সমাজে একঘেয়েমি ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে জনগণের অংশগ্রহণ কমে যায়, গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই বিভাজনের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা সরাসরি অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ কমায়, রপ্তানি বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ায়। বিশেষ করে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করে। কিন্তু রাজনীতির বিভাজন এবং এর নেতিবাচক প্রতিফলন বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেয়। একইভাবে শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মীয় বা গোষ্ঠীগত উত্তেজনা, সবই পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক বিভাজনের উপপাদ্য হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিভাজনের ফলে সমাজে বিভাজিত চেতনার যে দানব তৈরি হচ্ছে, তা আরও গভীর এক সংকটের জন্ম দিচ্ছে, মানসিক দূরত্বের।

গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায়, এমনকি পরিবারের মধ্যেও রাজনৈতিক মতবিরোধ যেন এক অবিচ্ছেদ্য দেয়াল তৈরি করেছে। এই দেয়াল ভেঙে ফেলার দায়িত্ব যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের, তেমনি নাগরিকদেরও রয়েছে একটি সচেতন ভূমিকা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ, ভাষার ব্যবহার, এবং পরস্পরের প্রতি অসহিষ্ণুতা এই দেয়াল আরও পোক্ত করে তুলছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজন তাই কেবল দলীয় দ্বন্দ্ব নয়, এটি এখন একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। এই বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, গড়ে তুলছে তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এই প্রজন্মের ওপর। কিন্তু তারা যদি রাজনৈতিকভাবে চেতনাহীন, নেতিবাচক ও অসহিষ্ণু মানসিকতা নিয়ে বড় হয়, তবে তাদের দ্বারা নির্মিত ভবিষ্যৎ কতটা আশাব্যঞ্জক হবে, সে প্রশ্ন গভীর ভাবনার দাবি রাখে।

তবে আলোচনার এখানেই শেষ নয়। রাজনৈতিক বিভাজনের এই জটিল প্রেক্ষাপটকে পেরিয়ে কীভাবে একটি ইতিবাচক, সমন্বয়মূলক ও উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব? ইতিহাস, সমকালীন উদাহরণ, এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি। এই সবকিছুর আলোকে পরবর্তী ধাপে আমরা অনুসন্ধান করব এই প্রশ্নের উত্তর। রাজনৈতিক বিভাজন যতই গাঢ় হোক না কেন, তা যদি একটি দেশের গণতান্ত্রিক বিকাশ ও প্রতিষ্ঠানগত শৃঙ্খলাকে সংহত করে, তবে তা একটি ইতিবাচক শক্তিতে রূপ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে এই বিভাজন এতটাই বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত রূপ নিয়েছে যে, এটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সংসদ এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আজ দলীয় প্রভাব ও সন্দেহের চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে। ফলে জনগণের আস্থা কমছে, গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি তৈরি হচ্ছে একধরনের বিতৃষ্ণা। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং দীর্ঘমেয়াদে তা একটি জাতিকে আত্মপরিচয়হীনতার দিকে ঠেলে দেয়।

রাজনৈতিক বিভাজনের আরেকটি বড় সমস্যা হলো জাতীয় স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা। এই প্রবণতা একদিকে যেমন সমাজে বিভাজন বাড়ায়, তেমনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে সৃষ্টি করে এক অদৃশ্য প্রতিরোধ। উদাহরণস্বরূপ, কোনো জাতীয় সংকট বা দুর্যোগের সময়ও আমরা দেখতে পাই দলীয় অবস্থান থেকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে, যেখানে প্রয়োজন ছিল ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগ। করোনা মহামারির সময় এ রকম দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যেখানে দলীয় দোষারোপ, তথ্য গোপন এবং সমন্বয়ের অভাব জাতীয় সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছিল। একটি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশে এ ধরনের পরিস্থিতি আরও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হতো।

তবে শুধুই নেতিবাচকতা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনের চিত্র আঁকা যথার্থ নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই দেশের জনগণ বারবার সংকট মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ একাত্ম হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে।

এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়ে দেয়, রাজনৈতিক বিভাজন যখনই সীমা অতিক্রম করে জাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে, তখনই জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রগতির নতুন দ্বার খুলে দিতে সক্ষম। তাই রাজনৈতিক বিভাজনকে পুরোপুরি অকার্যকর না ভেবে, এটিকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি। বিভাজনকে যদি রাজনৈতিক শিক্ষার অংশ, পরস্পরের থেকে শেখার একটি ক্ষেত্র এবং গণতান্ত্রিক মতবিনিময়ের অবকাশ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে তা সমাজে সৃজনশীল চেতনা জন্ম দিতে পারে। এজন্য চাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উন্নয়ন। নেতৃত্বের মধ্যে থাকতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বৃহত্তর স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতা।

জনগণের মধ্যেও গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা, যাতে তারা শুধু আবেগে নয়, যুক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আগামীর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তিনির্ভর, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সক্ষম ও সামাজিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র। এমন একটি রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজন উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। যেখানে মতভিন্নতা থাকবে, কিন্তু সেই ভিন্নতা কাউকে নিঃস্ব করবে না, বরং সবাইকে সমৃদ্ধ করবে। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ধ্বংস করার প্রতিযোগিতায় না গিয়ে, একে অপরকে উন্নয়নের সহযাত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে।

এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। শিক্ষা যদি নাগরিকত্ব, অধিকার, দায়িত্ব ও বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে রাজনীতি হবে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত, চিন্তার রসদে সমৃদ্ধ এক পথ। তরুণদের মাঝে একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে পারলে তারা আগামীর রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে। অন্যদিকে, মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির ভূমিকাও এখানে অনস্বীকার্য। সাংবাদিকতা ও নাগরিক মতপ্রকাশ যদি দলীয় আনুগত্য নয়, বরং তথ্যনিষ্ঠতা ও জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে বিভাজনের মধ্যেও সত্য উদ্ঘাটিত হবে, এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ সুগম হবে।

একইভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যদি রাজনৈতিক সচেতনতাকে উৎসাহ দেওয়া যায়, অপপ্রচার ও ঘৃণা ছড়ানোর পরিবর্তে তথ্যভিত্তিক আলোচনার চর্চা হয়, তবে রাজনৈতিক বিভাজন আর বিভ্রান্তির কারণ হবে না; বরং একটি সচেতন, যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের সহায়ক হবে। সবশেষে বলা যায়, রাজনৈতিক বিভাজন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এটি দেশের অগ্রগতি, সামাজিক সংহতি ও নেতৃত্ব বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি আমরা এর মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ না নিই।

তবে একই সঙ্গে এ কথা বলা যায়, বিভাজনকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যদি আমরা এই ভিন্নতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি, তবে আগামীর বাংলাদেশ হবে এক বহুমাত্রিক, সহনশীল ও সম্মিলিত চেষ্টার ফল। সেখানে রাজনীতি হবে বিভাজনের নয়, সংহতির প্রতীক; বিভ্রান্তির নয়, দিকনির্দেশনার বাহক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎনির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ওপর, আমরা কি বিভাজনের গভীর খাদে তলিয়ে যাব, নাকি একে অতিক্রম করে এক নতুন পথ রচনা করব? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা কেমন একটি দেশ রেখে যেতে চাই, তা আমাদের আজকের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মনোভাব এবং দায়িত্ববোধ নির্ধারণ করে দেবে। সেই বিবেচনায়, রাজনৈতিক বিভাজনের ফলপ্রসূতা নির্ভর করছে আমাদের অভ্যন্তরীণ মানসিকতা এবং সচেতন উদ্যোগের উপর। সময় এসেছে, এই বিভাজনের সীমারেখা অতিক্রম করে আমরা যেন এক উদার, বিকাশমান ও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনতে পারি।