সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৯:০৫ এএম

শিক্ষকদের শুভবোধ জাগ্রত হোক

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৯:০৫ এএম

শিক্ষকদের শুভবোধ জাগ্রত হোক

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতি গঠনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে শিক্ষকতা ছিল জ্ঞানের আলো জ্বালানোর মহৎ ব্রত। অথচ সম্প্রতি শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা দুঃখজনক তো বটেই সেই সঙ্গে  উদ্বেগেরও কারণ।

রোববার রূপালী বাংলাদেশে ‘জোচ্চুরিতেও কম যান না শিক্ষকরা’ শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে বাড়িভাড়া কেটে রাখা হচ্ছে না। এতে গত দুই অর্থবছরে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অগ্রিম নেওয়া ৪৬ কোটির বেশি টাকা এখনো সমন্বয় করা হয়নি। আরও আছে অতিরিক্ত সম্মানী গ্রহণ, ক্যাশবইয়ের সঙ্গে ব্যাংক হিসাবে গরমিলসহ নানা অনিয়ম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিচ্ছে, ৩০১তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মতেই টাকা কম কেটে রাখা হচ্ছে। আর মীর মরাশররফ হোসেন হলের বাসাগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় ২৫ শতাংশ বাড়িভাড়া কর্তন করা হচ্ছে।

একই চিত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কোয়ার্টারেও বসবাসকারীদের। এখানে তাদের বেতন হতে প্রাপ্ত বাড়িভাড়া ভাতা থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয়। এভাবেই দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাস করা সত্ত্বেও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন বিল হতে নির্ধারিত টাকা থেকে কম বাড়িভাড়া কর্তন করায় গত দুই বছরে সরকারের ৩০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ৩২২ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও  আরও ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৪৬ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৩ টাকা নানাভাবে অগ্রিম নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রিম ঋণ নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু শিক্ষকরা তা দীর্ঘদিন থেকে পরিশোধ করছেন না। এর বাইরেও ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ততার অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে আরও ৭ লাখ সাঁইত্রিশ হাজার টাকা।

এই আর্থিক অনিয়মকে অনেক শিক্ষক নানা অজুহাত দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কোথাও বলা হচ্ছে কোয়ার্টার জরাজীর্ণ, কোথাও গবেষণা খাতে ব্যয় হয়েছে বলে অগ্রিম টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। কিন্তু যুক্তি যতই দেওয়া হোক, এর নাম অনিয়ম ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়। আর যখন শিক্ষকরা নিজেরাই এ ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন, তখন ছাত্রদের কাছে নৈতিক শিক্ষা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হোক কিংবা স্বশাসিত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রের অর্থই শেষ পর্যন্ত এর যোগানদাতা। অথচ সেই রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার হচ্ছে নিয়মিত। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বারবার অনিয়ম ধরা পড়লেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় জবাব দেয় না বা এড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমছে।

এখানে শুধু অর্থ ফেরত আনা বা অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন। তারা যেন বুঝতে পারেন, শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, এটি নৈতিকতার এক অনন্য দায়িত্বও। তাই সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেই শুভবোধ জাগ্রত হতে হবে। অর্থ আত্মসাৎ বা সুবিধা ভোগের পথ থেকে সরে এসে তাদের হতে হবে সততা ও দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আপত্তিকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত আনা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষা হলো জাতির প্রাণশক্তি। আর শিক্ষক সেই প্রাণশক্তির কারিগর। সেই শিক্ষকরাই যদি নিজের দায়িত্বে অবহেলা করেন, তাহলে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ে। তাই সময় এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধারের। 

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সুন্দর একটি আগামী প্রজন্মের স্বার্থে দেশের শিক্ষক সমাজ তাদের শুভবোধ জাগ্রত করবেন।  
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!