ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হার্টের রিং সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
সিন্ডিকেট

হৃদরোগের চিকিৎসায় করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিং অপরিহার্য উপাদান। জীবন বাঁচানোর এই যন্ত্রটিকে ঘিরে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর বাণিজ্য। সরকারি উদ্যোগে সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রিংয়ের দাম ১০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে। অক্টোবর থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু আশঙ্কা রয়ে গেছেÑ এই সুবিধা আসলেই কতটা পাবে সাধারণ মানুষ? 

রোববার রূপালী বাংলাদেশের ‘হার্টের রিং বাণিজ্যে বাড়ছে হার্টবিট’ শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হার্টের রিং সিন্ডেকেটের ভয়াবহ চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার রিং প্রতিস্থাপন হয়; যার অধিকাংশই আসে ভারত, চীন, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড কিছু আমদানি করে সরকারি হাসপাতালগুলোয় দিয়ে থাকে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে-এর ব্যবহার বেশি। আমদানির সময় একেক রিংয়ের মূল্য গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। বার মেটাল রিংয়ের (বিএমএস) ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রায় ৩৪ গুণ বেশি দাম রাখা হয়।

এর পেছনে রয়েছে চিকিৎসক-হাসপাতাল কমিশন সিন্ডিকেট। রিং সরবরাহকারীরা চিকিৎসক ও হাসপাতালকে কমিশন দিয়ে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ব্যবহারে বাধ্য করে। এতে রোগীকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা দামি রিং পরানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ রিং ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় ব্যবহৃত রিং পুনঃপ্যাকেজিং করে ব্যবহারের অভিযোগ অহরহ। এ ছাড়া চীনের নকল বা কম মানের রিংও দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। নির্দিষ্ট কোম্পানির রিং ব্যবহারে ডাক্তারদের চাপ দেওয়া হয় কমিশনের বিনিময়ে। এতে একদিকে রোগীরা প্রতারিত হন, অন্যদিকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট হয়।

সরকার এবার দাম নির্ধারণ করেছে এবং হাসপাতালগুলোকে ৫ শতাংশের বেশি সার্ভিস চার্জ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলোÑ কে করবে নজরদারি? দেশের সব হাসপাতাল তদারকির মতো জনবল সরকারের নেই। ফলে আগের মতোই সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার আশঙ্কা প্রবল। রোগীরা যদি প্রকৃত ইনভয়েস না পান, রিংয়ের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইউআইএন) যদি গোপন রাখা হয়, তবে সরকার ঘোষিত দাম কাগজে-কলমেই থেকে যাবে। সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে মাত্র ৪০০-৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় করলেই সব রোগীকে বিনা মূল্যে রিং দেওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য বাজেটের প্রেক্ষাপটে এটি মোটেই অযৌক্তিক নয়। সরকার চাইলে সহজেই এ খাতে ভর্তুকি দিয়ে রোগীদের আর্থিক দুরবস্থার অবসান ঘটাতে পারে।

হার্টের রিং কোনো বিলাসীপণ্য নয়। এটি জীবন রক্ষার সরঞ্জাম। তাই ব্যবসায়ীদের মুনাফার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষকে অসহায় করে রাখার সুযোগ দেওয়া যাবে না। রিং সরবরাহ ও ব্যবহারের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালগুলোয় নতুন দামের তালিকা প্রকাশ, রোগীর হাতে ইউআইএন সরবরাহ, নিয়মিত তদারকি এবং অনিয়মকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা জরুরি।
আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও প্রয়োগের শক্তি যদি দুর্বল হয়, তাহলে ‘হার্টের রিং সিন্ডিকেট’ আগের মতোই বহাল থাকবে। এভাবে জীবন বাঁচানোর চিকিৎসাকে বাণিজ্যের খপ্পরে ফেলে রাখা অনৈতিক ও অমানবিক। এখনই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার, রোগীর জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, যে কোনো মূল্যে।