বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানাত লোকমান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

সাহিত্যের রাজনীতি

হাসানাত লোকমান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

সাহিত্যের রাজনীতি

সাহিত্য কখনোই কেবল শব্দের বিনোদন নয়, এটি ইতিহাসের অন্তর্লিপি, মানুষের নীরব আর্তনাদ, সময়ের অদৃশ্য প্রতিবাদ।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সাহিত্য কি রাজনীতি থেকে পৃথক? উত্তর হলো না। সাহিত্য রাজনীতিকে অনুকরণ করে না, কিন্তু রাজনীতির ভাষা বদলে দেয়।

রাজনীতি যেখানে ক্ষমতার, সাহিত্য সেখানে চেতনার। আর সেই চেতনার প্রতিরোধই হলো সাহিত্যের রাজনীতি।

সাহিত্যের রাজনীতি

‘সাহিত্যের রাজনীতি’ মানে দলীয় মতাদর্শ নয়। এটি হলো সেই জটিল সম্পর্ক যেখানে ভাষা, অর্থ, ক্ষমতা ও ন্যায়বোধ একে অপরকে প্রভাবিত করে। ফরাসি দার্শনিক জ্যাক রঁসিয়ের তার ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ খরঃবৎধঃঁৎব গ্রন্থে বলেছেন-

‘ঞযব ঢ়ড়ষরঃরপং ড়ভ ষরঃবৎধঃঁৎব ষরবং হড়ঃ রহ যিধঃ রঃ ংধুং, নঁঃ রহ যিধঃ রঃ ধষষড়ংি ঃড় নব ংববহ ধহফ যবধৎফ.’

অর্থাৎ সাহিত্য রাজনীতি করে, তার উপস্থাপনায়, তার নীরবতায়, তার দৃষ্টিভঙ্গিতে।

যে সাহিত্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না, সে মূলত ক্ষমতার পাশে দাঁড়ায়। অতএব, প্রতিটি লেখাই একটি রাজনৈতিক অবস্থান হোক তা সরব প্রতিবাদ, বা নীরব প্রতিস্বর।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সাহিত্যের রাজনীতি

প্রাচীন মহাকাব্যগুলো যেমন রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, ওডিসি সবই রাজনৈতিক নীতিশিক্ষার কাব্য। শেক্সপিয়ার তার নাটকে রাজকীয় ষড়যন্ত্র ও মানবিক উচ্চাশার সংঘাত দেখিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্রোহ করেছেন ভাষার সামাজিক একচ্ছত্রতাকে ভেঙে;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবতার রাজনীতি নির্মাণ করেছেন। নজরুল ইসলাম গর্জে উঠেছেন দাসত্ব ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে;

আহমদ ছফা, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক তারা রাষ্ট্র, জাতি, এবং বুদ্ধিজীবীর নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি বড় মুহূর্তেই রাজনীতি ও সাহিত্য পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে।

লেখক এক নীরব রাজনীতিক

লেখক কখনো ক্ষমতার রাজনীতিক নন; তিনি এক ধরনের অদৃশ্য বিপ্লবী। তার হাতে অস্ত্র নেই, কিন্তু তার কলমে আছে বোধ, যুক্তি, এবং অগ্নি।

তিনি শাসকের নয়, পাঠকের বিবেক জাগিয়ে তোলেন। সেই জাগরণই একদিন ইতিহাসে রূপ নেয়।

সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন

‘অৎঃ রং হবাবৎ রহহড়পবহঃ.’

অর্থাৎ, শিল্প কখনো নিরপেক্ষ নয়; যে নীরব থাকে, তার নীরবতাও এক রাজনৈতিক ঘোষণা।

সমকালীন বাস্তবতায় সাহিত্যের রাজনীতি

আজকের বিশ্বে সাহিত্যের রাজনীতি আরও বহুমাত্রিক। নারীবাদী, উপনিবেশ-পরবর্তী, কুইয়ার, পরিবেশবাদী ও প্রান্তিক সাহিত্য সবই ক্ষমতার ভাষাকে পুনর্লিখন করছে। সাহিত্য আজ কেবল সৌন্দর্যের নয়, ন্যায়েরও অন্বেষণ। বাংলাদেশে আজকের তরুণ লেখকরাও সাহসের সঙ্গে বলছেন

‘রাষ্ট্র যদি মানুষকে ভুলে যায়, আমরা মানুষকে মনে রাখব।’ এই উচ্চারণই সাহিত্যের প্রকৃত রাজনীতি, যেখানে কলম হয়ে ওঠে পতাকা, আর কবিতা হয়ে ওঠে আন্দোলনের গোপন গান।

সাহিত্যের রাজনীতি হলো, দৃশ্যমান ক্ষমতার বিরুদ্ধে অদৃশ্য প্রতিরোধের ভাষা। এটি সংসদে নয়, রচিত হয় কবিতায়; এটি ভাষণের নয়, বিবেকের পরিসরে ঘটে। সত্যিকার অর্থে, সাহিত্যই সেই স্থান যেখানে মানুষ নতুনভাবে চিন্তা করে, কে শাসন করার অধিকার রাখে, কার কণ্ঠ শোনা যায়, আর কার নাম লেখা হয় ইতিহাসের পাতায়।

যে কবি শব্দে আগুন রাখেন, যে গল্পকার নীরবতার ভেতরে বিদ্রোহের নকশা আঁকেন, যে ঔপন্যাসিক মানুষের মুখে ফিরিয়ে দেন হারানো স্বর তারা রাজনীতির মন্ত্রী নন, তারা ইতিহাসের স্থপতি। একদিন রাজনীতির পতাকা ঝুলে পড়বে, রাষ্ট্রের ভাষা বদলে যাবে, কিন্তু কবিতার একটি লাইন

‘আমি মানুষকে ভালোবাসি’

চিরকাল বাজবে সময়ের অর্কেস্ট্রায়।

তখনই বোঝা যাবে রাজনীতি কেবল সংসদের ভাষা নয়, তা জন্ম নেয় গল্পের বাক্যে, উপন্যাসের বেদনায়, কবিতার হৃৎস্পন্দনে। আর সেই নীরব আগুনের নাম সাহিত্যের রাজনীতি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!