বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১২ নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি সত্ত্বেও নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বজুড়ে শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ‘২০২১ সালে আইসিডিডিআরবি-এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ার কারণে ৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ২৪০০০ (১৮%) শিশুর মৃত্যু হয়। ‘(সোর্স: যঃঃঢ়ং://ৎফপঁ.নব/বগকপ৯ )।
আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে, নিউমোনিয়াকে কেবল ঠান্ডাজনিত কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ হিসেবে দেখা ঠিক নয়Ñ এটি আসলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। শীতের কারণে নয়, বরং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণেই নিউমোনিয়া হয়। যখন মানসিক চাপ, পুষ্টিহীনতা বা দূষণের কারণে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সাধারণ সংক্রমণও ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
সংক্রমণের বাইরেও রয়েছে অন্তর্নিহিত কারণ
যদিও ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নিউমোনিয়ার তাৎক্ষণিক কারণ হিসেবে পরিচিত, তবে এর মূল কারণ জেনে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। মূল কারণগুলো হলো-
- পরিবেশ এবং খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ ও দূষণের প্রভাব
- অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্যহীনতা
- ভিটামিন ডি, জিঙ্ক ও ভিটামিন সি-এর ঘাটতি
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ
- ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ
প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপায়
চীনের গবেষক যুয়ো হূয়াং মেং সম্প্রতি ঘওঐ এ প্রকাশিত তার কোভিড-১৯ নিয়ে এক গবেষণায় উল্লেখ করেছেন প্রতিরোধই নিউমোনিয়া মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। (সোর্স: যঃঃঢ়ং://ঢ়সপ.হপনর.হষস.হরয.মড়া/ধৎঃরপষবং/চগঈ ৯৭০১৪৫৫/) চিকিৎসার পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নি¤েœাক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করুন-
স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক এবং কেমিক্যাল ফিড খাওয়ানোর কারণে মুরগি, ডিম ও গরু/ছাগলের মাংস থেকে টক্সিক উপাদানগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমিত করে, তাই এগুলো বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা প্রাণী (মাছ, মুরগি, ডিম), অরগানিক দুধ খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
রসুন, হলুদ, কোল্ড প্রেস নারিকেল তেল, সবুজ শাক-সবজি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
ভেষজ সহায়তা : তুলসী, থাইম ও যষ্টিমধু, গ্রিন টি, হারবাল টি, হলুদের চা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন-ডি এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
জীবনযাপন পরিবর্তন : নিয়মিত শ্বাস এর ব্যায়াম, ইয়োগা, পর্যাপ্ত পানি পান ও সক্রিয় জীবনধারা ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখে।
‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস’ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিরোধ শুধু ওষুধ নয়, এটি একটি সার্বিক জীবনধারা, পুষ্টি, জীবনযাপন ও পরিবেশের ভারসাম্যের মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই হতে পারে জীবনের সুরক্ষার প্রকৃত উপায়।
লেখক: অধ্যাপক ড. মজিবুল হক (পিএইচডি, এনডি, এফডিএম),আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার ঢাকা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন