বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


অরণ্য পাশা, সাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:২৭ এএম

কৃষক থেকে রাষ্ট্রচিন্তা : তারেক রহমানের রাজনীতির মানবিক মাত্রা

অরণ্য পাশা, সাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:২৭ এএম

কৃষক থেকে রাষ্ট্রচিন্তা : তারেক রহমানের রাজনীতির মানবিক মাত্রা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বের প্রশ্নটি যতবার সামনে আসে, ততবারই নতুন প্রজন্মের আলোচনায় একটি নাম ঘুরে-ফিরে আসে, তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেউ দেখেন ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, কেউ দেখেন এক পরিবর্তনের সম্ভাবনা। আবার কেউ তার রাজনৈতিক যাত্রাকে মূল্যায়ন করেন দেশীয় রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে। গত এক দেড় দশকে তিনি দেশের রাজনীতিতে সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও, রাজনৈতিক বিতর্ক, গবেষণা, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ধারাবাহিকভাবেই। বিশেষত তরুণ সমাজের একটি বড় অংশের কাছে তিনি নেতৃত্বের নতুন প্রতীক হয়ে উঠেছেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের মূল্যায়ন কেবল জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে হয় না; হয় তার রাজনৈতিক দর্শন, চিন্তা, কাজের ধরন, এবং বৃহত্তর রাষ্ট্রচিন্তার ওপর। এ দৃষ্টিকোণেই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তারেক রহমানকে নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক মহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজের রিজেন্ট স্ট্রিটের ইউনিভার্সিটি আর্মস-এর চার্চিল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনার এই আলোচনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের গবেষক, রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা তার রাজনৈতিক দর্শন বিশ্লেষণ করেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর অগ্রগতি এবং তৃণমুখী সংগঠন, যা তারেক রহমানের রাজনীতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিরেক্টর ফ্রান্সিস ডেভিস মন্তব্য করেন, তারেক রহমানের ভাবনা মানুষের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন তৈরি করতে পারে। তিনি মনে করেন, সামাজিক ন্যায়, উন্নয়ন এবং মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তারেক রহমানের রাজনীতির কেন্দ্রীয় অক্ষ। ইয়ং ফাউন্ডেশনের ডেভিড এগলার তাকে বলেন ‘ডিজিটাল অগ্রগতির এক রাজনৈতিক প্রকৌশলী’, যেখানে প্রযুক্তিকে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখার প্রবণতাই প্রধান। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য জন ক্লেটন মন্তব্য করেন, সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতে পারা একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ, এখানেই তিনি তারেক রহমানকে আলাদা করে দেখেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত-বতর্মান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রত্যেক যুগেই কিছু নেতা নতুন রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শহিদ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রচিন্তায় যে পরিবর্তন এনেছিলেন, পরবর্তী সময়ে বেগম খালেদা জিয়া দলের প্রতিষ্ঠানগত কাঠামোকে যেভাবে মজবুত করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় অনেকেই তারেক রহমানকে এক নতুন রাজনৈতিক পাঠের বাহক হিসেবে দেখেন। তিনি তৃণমূলে গিয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর যে প্রয়াস নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটি ছিল একটি ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। প্রচলিত সভা-সমাবেশনির্ভর রাজনীতিকে বদলে গ্রামে-গঞ্জে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন-অর্থনীতি-শিক্ষা-কৃষি-প্রযুক্তির তথ্য সংগ্রহ, এগুলো তার রাজনৈতিক চিন্তার একটি বাস্তবধর্মী দিককে তুলে ধরে।

বাংলাদেশের কৃষক আজও তার ন্যায্য প্রাপ্যটির জন্য সংগ্রাম করে। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম উৎপাদন খরচের অর্ধেকেও না উঠলে যখন চাষিরা সারা মৌসুমের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্য আবারও মনে করিয়ে দিলেন, এ দেশের রাজনীতিতে এখনো কেউ একজন আছেন। যিনি কৃষকের দুঃখ-বেদনা নিজের রাজনৈতিক হিসাবের উপরে স্থান দেন।

এই সময়টিতে কথিত গণভোটের ব্যয় নয়, বরং কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণাগারের মতো মৌলিক অবকাঠামো স্থাপনই দেশের জন্য বেশি জরুরি, তারেক রহমানের এ বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে জনজীবনের বাস্তবতা বোঝার এক সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। যে দৃষ্টিভঙ্গি তাকে তার প্রয়াত বাবা, স্বাধীনতার ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি-আদর্শের ধারাবাহিকতায় দাঁড় করায়।

কারণ জিয়াউর রহমান যেমন ক্ষমতার চেয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সবুজ বিপ্লব, কৃষি খাতে প্রযুক্তি, সেচ ও প্রণোদনা, গ্রামীণ অর্থনীতির বিস্তার, এসব ছিল তার রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম ভিত্তি; তেমনি তারেক রহমানের বক্তব্যেও আমরা দেখি একই ধারার প্রতিফলন। রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের বাইরে গিয়ে কৃষকের লোকসানকে রাষ্ট্রের লোকসান হিসেবে দেখা, এই মানসিকতা শুধু মানবিক নয়, রাষ্ট্রনৈতিকভাবেও অত্যন্ত পরিণত।

রাজনীতি মানেই শুধু স্লোগান নয়; রাষ্ট্র নিয়ে সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিও জরুরি। তারেক রহমান যে দেশের স্বনির্ভরতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, তা তার ভাষণ, বক্তব্য ও বিভিন্ন পরিকল্পনায় স্পষ্ট। কৃষি উন্নয়ন, স্থানীয় সম্পদ রক্ষা, গ্রামীণ উৎপাদন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা, ছোট উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়া, প্রযুক্তিকে গ্রামমুখী করা, এসবই ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক টেকসই কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তিনি বিশ্বাস করেন, ৬৮ হাজার গ্রামকে শক্তিশালী করা ছাড়া বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব। অনেকেই এ ধারণাকে জিয়ার যুগের সফল গ্রামীণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি সমসাময়িক সংস্করণ হিসেবে দেখেন।

রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের আস্থা অর্জন। তারেক রহমানের প্রতি তরুণদের একটি বড় অংশের আকর্ষণ এসেছে নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রত্যাশা থেকে। তারা একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে সততা, দূরদৃষ্টি, এবং সময়োপযোগী আধুনিক চিত্র খোঁজে। এই জায়গায় তারেক রহমানের উপস্থিতি তাদের অনুপ্রাণিত করে।

অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনা, মামলা-মোকদ্দমা, নিষেধাজ্ঞা, প্রচার-বিপর্যয়, সবই এ দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশ। তারেক রহমানও এর বাইরে নন। তিনি কখনো কখনো তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। আবার একই সঙ্গে সমর্থকদের কাছ থেকে পেয়েছেন অগাধ জনপ্রিয়তা। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে যেমন চাপে ফেলেছে, তেমনি রাজনৈতিক ইতিহাসে তাকে আরও আলোচিতও করেছে। বলা যায়, তিনি সমর্থন যেমন পেয়েছেন, প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক প্রতিরোধও ততটাই পেয়েছেন।

দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় অনেক সময় তার রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আবার অন্যদিকে অবস্থান দূরত্ব সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক পরিম-লের কেন্দ্রীয় চরিত্র হতে পারা, এটিও নজরকাড়া বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি তাকে একদিকে যেমন রাজনৈতিক ন্যারেটিভের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। অন্যদিকে অনেকের কাছে তাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতীক করে তুলেছে।

বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কোন দিকে এগোবে, এ প্রশ্ন আজকেই নতুন নয়। তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী হওয়া, এবং ইতিবাচক রাষ্ট্রচিন্তা, এই সবকিছুর ভিত্তিতে অনেকেই মনে করেন তারেক রহমান ভবিষ্যতের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এটা একদল মানুষের আশা। অন্যদল মানুষের প্রশ্ন, এই আলোচনার মধ্যেই তিনি রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছেন।

রাজনীতি পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা মানুষেরা বিশ্বাস করেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন এবং নতুন এক রাজনৈতিক পথচলা শুরু করবেন। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, তারেক রহমানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিবেশ, দলের অভ্যন্তরীণ শক্তি, জাতীয় নির্বাচনব্যবস্থা এবং জনগণের প্রত্যাশার ওপর।

যে মতোই থাকুক, একটি বিষয় স্পষ্ট, তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনিবার্য আলোচনার নাম হয়ে উঠেছেন। তাকে নিয়ে মতবিরোধ আছে, সমর্থন আছে, তীব্র বিতর্কও আছে কিন্তু উপেক্ষা নেই। নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন তরুণেরা নতুন প্রশ্ন তুলছেন, তখন তারেক রহমানকে তারা সম্ভাবনার একটি জানালা হিসেবে দেখেন। এ বাস্তবতা রাজনৈতিক বিশ্লেষণে গুরুত্বের দাবিদার।

এ সময়ের বাংলাদেশ রাজনৈতিক উত্তরণ ও পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এমন মত প্রকাশ করেন অনেকেই। সেই পরিবর্তনের যাত্রায় তারেক রহমান ভূমিকা রাখতে পারেন কি না, রাখতে চাইলে কেমন ভূমিকা রাখবেন। আর দেশের মানুষ কীভাবে তার নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করবে, এ প্রশ্নই এখন মূলত সময়ের হাতে ন্যস্ত। তবে একটি কথা নিশ্চিত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির আলোচনায় তিনি যে একটি শক্তিশালী নাম হয়ে উঠেছেন, তা নিতান্তই কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়; তা এসেছে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা এবং নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থেকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ যে পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা, যে গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের দাবি, সেই নতুন যাত্রার সম্ভাব্য নেতৃত্ব হিসেবে অনেকেই তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কথা, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের জীবন-সংগ্রাম, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ, এসব বিষয়ই অগ্রাধিকার পায়। এ সময়ে আমরা চাই এমন একটি নেতৃত্ব, যে ক্ষমতার জন্য নয়, মানুষের অধিকারের জন্য লড়বে। যে আধুনিক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তারেক রহমানের জন্মদিনে সেই আশাই জনগণের  মনে জেগে ওঠে, একদিন বাংলাদেশ ফিরে পাবে স্বচ্ছ রাজনীতি, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং মানুষের মর্যাদা। শুভ জন্মদিন তারেক রহমান। দেশের ভবিষ্যৎ হোক আরও আলোকিত, আরও গণতান্ত্রিক, আরও মানবিক।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!