আয়ারল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে এখন বিদেশি প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর বড় নির্ভরতা। সরকারি এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেখানে কর্মরত নার্সদের প্রায় অর্ধেকই বিদেশি নাগরিক। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়া থেকে আসা নার্স ও চিকিৎসকরা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে চিকিৎসা পেশাজীবীর ঘাটতি বেড়ে গেছে। ফলে আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি নার্স ও ডাক্তারদের জন্য একাধিক নতুন রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে।
কীভাবে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা
প্রথম ধাপ হলো যোগ্যতা যাচাই ও নিবন্ধন। নার্সদের জন্য আছে ঘঁৎংরহম ধহফ গরফরিভবৎু ইড়ধৎফ ড়ভ ওৎবষধহফ (ঘগইও) এর অনুমোদন প্রক্রিয়া। চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে গবফরপধষ ঈড়ঁহপরষ ড়ভ ওৎবষধহফ।
একজন আবেদনকারীকে নিজের ডিগ্রি, অভিজ্ঞতা, এবং ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। এরপর কোনো আইরিশ হাসপাতাল বা হেলথকেয়ার গ্রুপ থেকে চাকরির অফার পাওয়া গেলে শুরু হয় ভিসা ও পারমিটের যাত্রা। এই প্রক্রিয়ায় অনেক বাংলাদেশি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সহায়তা দিচ্ছে, তবে অবৈধ দালালের ফাঁদে না পরা যাবে না।
বেতন ও জীবনযাত্রা
আয়ারল্যান্ডে একজন নার্সের গড় মাসিক আয় ২,৮০০-৪,৫০০ ইউরো। আর একজন চিকিৎসক বা স্পেশালিস্টের আয় ৬,০০০-১০,০০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে অভিজ্ঞতা ও পদভেদে। তবে জীবনযাত্রার খরচও তুলনামূলক বেশিÑ বিশেষ করে রাজধানী ডাবলিনে। বাসাভাড়া, পরিবহন ও খাদ্য খরচ বিবেচনা করে অনেকেই ছোট শহরে কাজের সুযোগ খোঁজেন।
চ্যালেঞ্জের দিকগুলো
আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে হলে ইংরেজি দক্ষতা (ওঊখঞঝ/ঙঊঞ) অপরিহার্য। কাজের সময়সূচি দীর্ঘ বিশেষ করে নার্সদের জন্য রাতের শিফট ও ওভারটাইম সাধারণ ঘটনা। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সময় অনেকের কাগজপত্র যাচাইয়ে মাসের পর মাস লেগে যায়। এ ছাড়া, কাজের জায়গা ও আবাসনের অভাবও বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে।
সম্ভাবনার দিগন্ত
আয়ারল্যান্ড সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে দশ হাজারের বেশি বিদেশি স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়া হবে। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের পেশাজীবীদের জন্যও খুলছে নতুন দরজা।
বিশেষ টিপস বাংলাদেশি চিকিৎসক/নার্সদের জন্য
- বাংলাদেশ-ভিত্তিক শিক্ষাগত ও প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট কয়েকটি দেশে স্বীকৃত হয় না প্রয়োজনে অতিরিক্ত সনদ বা পরীক্ষা থাকতে পারে।
- নিয়োগ বিজ্ঞাপনে ‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ৎবপৎঁরঃসবহঃ’ বা ‘ড়াবৎংবধং হঁৎংবং/ফড়পঃড়ৎং’ শব্দ থাকলে সত্যতা যাচাই করুন।
- কাজের স্ট্যান্ডার্ড ও বেতন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন- যেমন, পোস্টিং কোথায় হবে, শিফট সময়, থাকার সুবিধা।
- লোকেশন নির্বাচন করুন (ঢাকা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি) থেকে আবেদন করার আগে আইরিশ জীবনধারা ও খরচ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন।
- এজেন্সির মাধ্যমে হলে এজেন্সির লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন আছে কিনা দেখুন অনির্বাচিত/অবিশ্বাসযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে ঝুঁকি থাকতে পারে।
আয়ারল্যান্ড এখন শুধু চাকরির দেশ নয়, অনেকের জন্য নতুন জীবনযাত্রার প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য এটি এক সুযোগের ইউরোপীয় সেতুবন্ধন যেখানে পরিশ্রম, দক্ষতা আর সাদা এপ্রোন মিলে তৈরি করছে এক নতুন গল্প।

