সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


প্রবাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৬:৩৪ এএম

দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার ভারে নুয়ে পড়া জীবন

প্রবাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৬:৩৪ এএম

দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার  ভারে নুয়ে পড়া জীবন

অ্যালার্মের শব্দে শুরু হওয়া একটি দিন, শ্রমের ওপর উদীয়মান সূর্যের হালকা আলোকরশ্মি ভেদ করে গায়ে লাগে দূর দেশের ঠান্ডা হাওয়া, কিন্তু মনে হয় না এই হাওয়া নিজের। বহুদিন প্রবাসে কাটাতে কাটাতে এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে জীবন, যেখানে চারপাশের সবকিছু পরিচিত হয়েও অচেনা লাগে। মানুষের ভিড়, আলো-ঝলমলে রাস্তা, সুন্দর পরিবেশ, কিছুই যেন হৃদয়ের শূন্যতাকে ভরাতে পারে না। তবু ফিরে যাওয়া হয় না দেশের মাটিতে, ফিরতেও ইচ্ছে করে না। একটা মধ্যবর্তী জীবন, আমরা না বিদেশের পুরোপুরি নাগরিক, না দেশের পূর্ণাঙ্গ মানুষ। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এমনটাই বলছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা। কারো বয়স ২৫, কারো ৪৫, কারো আবার ৬০ পেরিয়ে গেছে। সবার কথার মধ্যেই এক ধরনের ক্লান্তির সুর ‘দেশে ফিরতে চাই, কিন্তু পারি না।’ কেউ বলে, ‘বাবা-মা বৃদ্ধ, তাদের ফেলে আসতে খারাপ লাগে।’ কেউ আবার জানায়, ‘দেশে ফিরলে সমাজের চাপ, আত্মীয়-স্বজনের প্রত্যাশা, আর্থিক হিসাব আমাকে ভয় দেখায়।’ এই ভয়ই আজ অনেক প্রবাসীকে বেঁধে ফেলেছে এক অদৃশ্য শিকলে। বছরের পর বছর দেশে যায় না শুধু এই আশঙ্কায় যে, দেশে ফিরলে সবাই ধরে নেবে টাকা নিয়ে এসেছে, সবাই বাসনা করবে কিছু এনে দিক, কেউ কেউ ভাববে বিদেশ মানেই ধনদৌলত। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। বিদেশে জীবন চলে কেবল হিসাব-নিকাশে, বেতন আসে আর সঙ্গে সঙ্গে বিল-ভাড়া-ইন্সুরেন্স-ক্রেডিট কার্ডে গায়েব হয়ে যায়।

অনেক প্রবাসী বলেন, দেশে গেলে তাদের দিকে তাকানোর চোখটাই বদলে যায়। যেন প্রবাসী মানেই অতিরিক্ত পাওনা। সমাজ ধরে নেয়, ‘তুমি বিদেশে থাকো, তুমি সফল, তোমার আর কোনো সমস্যা থাকতে পারে না।’ অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, প্রবাসেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মানসিক চাপ, একাকিত্ব, অনিশ্চয়তা। প্রতিটা দিন যেন একটা অবিরাম যুদ্ধÑ নিজের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে, পরিস্থিতির সঙ্গে। দেশে না যেতে পারার মধ্যে দুঃখের পাশাপাশি থাকে এক ধরনের অপরাধবোধ। বাবা-মায়ের মুখ আর আগের মতো দেখা হয় না, ভাইবোনদের সন্তান বড় হয়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে সম্পর্কগুলো দূরত্বে ভারী হয়ে ওঠে। এক সময় যারা ছিল সবচেয়ে কাছের, তারা হঠাৎ করেই হয়ে ওঠে দূরের মানুষ। ফোন কল, ভিডিও কল, বার্তা- সবই থাকে; কিন্তু তার মধ্যেও এক ধরনের ফাঁকা জায়গা জমতে থাকে, যা মানুষকে ধীরে ধীরে আরও ভেতরে ঠেলে দেয়। অনেক প্রবাসী মনে করেন, দেশে গেলে সবাই তাদের কাছে আশা নিয়ে দাঁড়াবে; কেউ টাকা চাইবে, কেউ কাজ চাইবে, কেউ ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলবে। এ কথাগুলো শোনার আগেই অনেকে দেশে যাওয়া এড়িয়ে চলেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা কমে না, কিন্তু ফিরে যাওয়ার সাহস কমে যায়। এদিকে বিদেশে থাকলেও সেখানে নিজের মানুষ কম।

একটি সীমিত কর্মজীবন, কিছু পরিচিত মুখ, মাঝে মধ্যে একসঙ্গে বসা, এটাই জীবনের সব। উৎসবে কেউ দরজায় নক করে না, ঈদ-বৈশাখে কেউ আনমনা হয়ে বলেও না ‘চলো বাড়ি যাই।’ এসব অভাব দিনশেষে তীব্র একাকিত্বে রূপ নেয়।  প্রবাসী জীবনকে অনেকেই বলেন, নবঃবিবহ ঃড়ি ড়িৎষফং। বিদেশে গেলে আপনি একজন ‘ইমিগ্রান্ট’, দেশে ফিরে গেলে ‘বিদেশফেরত’। দুই জায়গাতেই একটা অদৃশ্য দূরত্ব কাজ করে। বিদেশে জন্মালেও সন্তানদের মন পুরোপুরি বিদেশি হয় না, দেশে নিয়ে গেলে তাদের মন পুরোপুরি দেশিও হয় না। এই দ্বৈততার মাঝে অনেক পরিবার আটকে থাকে আজীবন। তা ছাড়া বিদেশে অতিরিক্ত কাজ, অতিরিক্ত দায়িত্ব, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা- সব মিলিয়ে জীবন ক্রমেই ভারী হয়ে ওঠে। কেউ কেউ সংসারের চাপ, কারো সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ, কারো আবার দেশে থাকা পরিবারের দায়িত্বের মধ্যে ডুবে যায়। নিজের স্বপ্ন, নিজের শখ, নিজের আনন্দ-সবই যেন হারিয়ে যায় নিত্যদিনের দায়বদ্ধতার ভিড়ে। সহজ কথায় বলা যায়, অর্থের সঙ্গে অনুভূতির লড়াই।

একদিকে থাকে পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব, অন্যদিকে নিজের ভেতরের শূন্যতা। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মানুষ যত বড়ই হোক, রাতে ঘুমাতে গেলে মনে পড়ে বাড়ির উঠোন, মায়ের ডাক, পাড়ার মোড়, বন্ধুদের আড্ডা, বৃষ্টির দিন, কিংবা উৎসবের সকাল। এসব কখনোই ভুলে থাকা যায় না। তবুও মানুষ থাকে। কারণ জীবন মানেই টিকে থাকা। আর প্রবাসী জীবন মানেই অদৃশ্য বোঝা বয়ে চলা এক দীর্ঘ, অন্তহীন পথচলা। সেই পথচলার মাঝেই জন্ম নেয় এক ধরনের মধ্যবর্তী জীবন, যেখানে মানুষ বেঁচে থাকে, কিন্তু পুরোপুরি কোথাও থাকে না।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!