শুধু ভারত নয়, ভারতের বাইরেও তার জনপ্রিয়তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিন দশক ধরে তিনি একাধারে রাজ করছেন স্ক্রিনে, এখনো তিনি পর্দায় এলে আবেগে ভাসেন অনুরাগীরা, এখনো তার সিনেমা মুক্তি পেলে সিনেমা হলের বাইরে ঝোলে হাউসফুল বোর্ড। তিনি আর কেউ নন, তিনি বক্স অফিসের বাদশা শাহরুখ খান।
খ্যাতি, জনপ্রিয়তা, সম্পত্তি থেকে শুরু করে অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। তবে আক্ষেপ ছিল, তিনি কোনো দিন জাতীয় পুরস্কার পাননি। এবার সেই আক্ষেপও ঘুচল। সম্প্রতি ঘোষণা করা হয় ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা। অভিনেতা থেকে পরিচালক, টেকনিশিয়ান থেকে কোরিওগ্রাফার সবাইকেই এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ‘জওয়ান’ সিনেমার হাত ধরে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেলেন শাহরুখ খান।
দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে একদিন মুম্বাইয়ে এসেছিল অভিনেতার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। বন্ধুর দাক্ষিণ্যে ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো কেটেছিল। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়েছেন রাজত্ব। ৩৩ বছর ধরে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন এমন একজন মেগাস্টার, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং শাহরুখ খান। ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘জওয়ান’-এ তার অনবদ্য অভিনয়ের জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ‘কিং খান’।
দেশের অন্যতম সেরা এই অভিনেতার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে অসংখ্য জনপ্রিয় এবং সফল সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। তার জনপ্রিয়তা কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। দেশ-বিদেশে একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ, কিন্তু ‘জওয়ান’-এর জন্য এ প্রথম তিনি জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পেলেন।
এই পুরস্কার জয় প্রমাণ করে যে শাহরুখ খান আজও দর্শকদের হৃদয়ে ‘কিং অব হার্টস’ হয়ে রাজত্ব করছেন। গত ৩৩ বছর ধরে তার অসাধারণ অভিনয়, ক্যারিশমা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি দর্শকদের মন জয় করে আসছেন। এই জাতীয় পুরস্কারের তিনি সম্পূর্ণ যোগ্য। সারা বিশ্বজুড়ে তার জনপ্রিয়তা সত্যটিই প্রমাণ করে, তিনি ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের সেরা সুপারস্টারদের মধ্যে একজন।
‘স্বদেশ’ সিনেমার পরেও যে পুরস্কার অধরা থেকে গিয়েছিল, সেই জাতীয় পুরস্কার শাহরুখের কাছে ধরা দিল ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে। পুরস্কার পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে শাহরুখ খান বলেন, ‘জাতীয় পুরস্কারের সম্মানিত হয়ে আমি ভীষণ খুশি। এটি এমন একটি মুহূর্ত, যা চিরকাল আমার মনে থেকে যাবে। যারা আমাকেই সম্মানের যোগ্য বলে মনে করেছেন তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ রাজু স্যার, অ্যাটলি স্যার আমাকে এ সিনেমায় সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’
শাহরুখের পাশাপাশি ‘টুয়েলভ ফেল’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারের সম্মানিত হয়েছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। পুরস্কারের কথা ঘোষণা হওয়ার পর তিনি একটি বিবৃতিতে জুরি সদস্য এবং অন্যদের ধন্যবাদ জানান।
এই আয়োজনে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়ও। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমাতে অভিনয় করে দীর্ঘ ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সম্মানিত হলেন তিনি।
অনুভূতি জানিয়ে রানী বলেন, ‘আমি অভিভূত। কাকতালীয়ভাবে এটি আমার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম জাতীয় পুরস্কার। একজন অভিনেত্রী হিসেবে, আমি আমার গোটা ক্যারিয়ারে অবিশ্বাস্য কিছু সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং সেগুলোর জন্য অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমাতে আমার কাজকে সম্মান জানানোর জন্য জাতীয় পুরস্কারের জুরিকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মুহূর্তটি সিনেমার পুরো দলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই এবং এ বিশেষ সিনেমায় কাজ করা প্রত্যেকের সঙ্গে, যা মাতৃত্বের অদম্য শক্তিকে উদযাপন করেছে। আমার কাছে পুরস্কারটি আমার ৩০ বছরের কাজের প্রতি গভীর নিষ্ঠা, অভিনয়ের প্রতি আমার আত্মিক সংযোগ এবং আমাদের এই সুন্দর চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি আমার ভালোবাসার এক দারুণ স্বীকৃতি।’
রানী আরও বলেন, ‘আমি এই জাতীয় পুরস্কার বিশ্বের সব অসাধারণ মায়েদের উৎসর্গ করছি। মায়ের ভালোবাসার মতো আর কিছু নেই এবং তার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য তার যে অদম্য শক্তি, তার তুলনা হয় না। একজন ভারতীয় অভিবাসী মায়ের গল্প, যিনি তার সন্তানের জন্য একটি জাতির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। একটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা নিঃশর্ত আর আমার যখন নিজের সন্তান হলো, তখন আমি তা উপলব্ধি করতে পারলাম। তাই এ জয়, সিনেমাটি আমার কাছে খুবই আবেগপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত। একজন মা তার সন্তানের জন্য পাহাড় সরাতে পারেন এবং পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারেন। এ সিনেমায় সেই কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।’
আপনার মতামত লিখুন :