শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রঙের মানুষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:১৬ এএম

প্রযোজক-শিল্পীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ওটিটির পর নীরবে হলে অনুদানের সিনেমা

রঙের মানুষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:১৬ এএম

ওটিটির পর নীরবে হলে  অনুদানের সিনেমা

সরকারি অনুদানের সিনেমায় উরাধুরা ধান্দা নতুন কিছু নয়। বছর যত গড়াচ্ছে অনুদানের সিনেমা নিয়ে ততই বাড়ছে নয়ছয়। অনুদান প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে এমন নানা অস্বচ্ছতার গল্প। অনুদানের সিনেমা নীরবেই নামেমাত্র দু-চারটি হলে মুক্তি পাচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। এখানে অনিয়মই যেন অলিখিত নিয়ম।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পায় সিনেমা ‘জলরঙ’। মানব পাচারের গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। ২০২৩ সালে সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি পেলেও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘদিন থমকে থাকার পর দুই বছর পর গত কোরবানি ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৮ জুন দেশীয় ওটিটি আইস্ক্রিনে নিয়ম না মেনেই মুক্তি পেয়েছিল ‘জলরঙ’ সিনেমাটি। নিয়ম অনুযায়ী অনুদানের সিনেমা নূন্যতম ২০টি হলে মুক্তি দিতে হয়। হলে আসার পর অন্য প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মানেনি ‘জলরঙ’ সংশ্লিষ্টরা। যদিও এই দায় প্রযোজকের ঘাড়ে চাপান পরিচালক কবিরুল ইসলাম রানা। তিনি সেসময় জানিয়েছিলেন, ‘জলরঙ’ মুক্তির বিষয়ে কিছু জানেন না। আরও বলেছিলেন, ‘আইস্ক্রিনের সঙ্গে প্রযোজকের চুক্তি হয়েছে। তবে প্রেক্ষাগৃহের পরই ওটিটিতে মুক্তি পাবে।’ কিন্তু হলের আগেই ওটিটিতে মুক্তি পায় সিনেমাটি। তার প্রায় দুই মাস পর অবশেষে নীরবে প্রচারণা ছাড়াই প্রেক্ষাগৃহে ‘জলরঙ’। আজ দেশের ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। এ তথ্য দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক দেলোয়ার হোসেন দিলু।

জানা গেছে, অনুদানের সিনেমা ন্যূনতম ২০টি হলে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারও কম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘জলরঙ’। যেসব হলে সিনেমাটি দেখা যাবে কয়েকটি বাদে বাকি হল থেকে অনেক আগেই দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সিনেমাটির গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও উপেক্ষিত অভিনয়শিল্পী ফারজানা সুমি। পাওনা ১৯ লাখ টাকা নিয়ে প্রযোজক নয়ছয় করছে বলে অভিযোগ জানিয়ে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি আমাকে ঘিরে গল্প এগিয়ে যায় কিন্তু পোস্টারে জায়গা পাইনি। তাছাড়া অন্য জনপ্রিয় শিল্পীদেরও পোস্টারে রাখা হয়নি। জলরঙ অনুদান পেতে আমি সহযোগিতা করেছিলাম, যা সবাই অবগত।

এক পর্যায়ে টাকার অভাবে থমকে যায় শুটিং। সিনেমাটি শেষ করার জন্য পরিচালক রান ভাই ও দিলু মামা আমার থেকে ২৫ লাখ ধার নেয়। আমাকে বলা হয়েছিল তৃতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন। বাকি টাকা মুক্তির পর পরিশোধ করবেন। মাত্র ৬ লাখ পরিশোধ করেছেন। এখনো ১৯ লাখ টাকা আজও পরিশোষ করেনি।’ সুমি আরও বলেন, ‘ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তাদের বিশ্বাস করে সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু প্রযোজক দিলু মামা এত বড় চিটার ও বাটপার জানতাম না। এখন পর্যন্ত চিত্রনায়ক কায়েস আরজু টাকা পায়। প্রডাকশন ম্যানেজার শফি আহমেদ প্রায় ছয় লাখ টাকা পাবে। পরিচালকসহ কমবেশি অনেকেই প্রযোজকের কাছে টাকা পায়। কারোই টাকা দেয় না।’ এই অভিনেত্রী বলেন, ‘তৃতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার পর প্রযোজক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নাটক নির্মাণ শুরু করেন। এরপর তার নানা নয়ছয় শুরু। বিষয়টি চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনকে জানিয়ে বিচার পাইনি। এমনকি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতিকে লিখিত জানাই কিন্তু তারাও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অথচ আমি মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে নিয়ে তাদের সহযোগিতা করে আজ দিশেহারা।’ সর্বশেষ সুমি বলেন, ‘আর কিছুদিন দেখে আমার টাকা ফেরত পেতে প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। অনেক অনুরোধ করে টাকা ফেরত পাইনি। চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনকে অবগত করেও সহযোগিতা পাইনি।’ সরকারি নিয়ম মানা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনুদানের সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেন্সর কপি ওটিটিতে বিক্রি করে এবং এখন হলে মুক্তি দিয়েছে। সিনেমার মূল আবহ সংগীত মাস্টার কপি পরিচালকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এমনকি সিনেমার কালার গ্রেডিং করা হয়নি। সম্পূর্ণ অনিয়ম করেই সিনেমাটি নিয়ে নয়ছয় করেছে।’ সুমির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি প্রযোজক দিলুর। তিনি উল্টো অভিনেত্রীর কাছে ১১ লাখ টাকা পাবেন বলে জানান। তার কাছে সব প্রমাণ আছে বলে জানান।

স্পন্সর এনে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানান দিলু। তিনি বলেন, ‘সিনেমার টেকনিশিয়ান বাদে আমার কাছে কেউ টাকা পাবে না। যারা টাকা পাবে তাদের ধীরে ধীরে টাকা পরিশোধ করে দেব। এসব পরিচালক রানার চক্রান্ত।’ সুমি বলেন, ‘তিনি যদি আমাকে ১১ লাখ টাকা দেন তার তো প্রমাণ আছে সেগুলো দেখাক। নিজের অপরাধ ডাকতে মিথ্যাচার করছে।’ এদিকে, নিজের সিনেমা মুক্তির খবর জানেন না চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, নবাগত চিত্রনায়িকা উষ্ণ হক, অভিনেত্রী এলিনা শাম্মীসহ অন্য শিল্পীরা। যোগাযোগ করা হলে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে আক্ষেপ করে সাইমন সাদিক বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকেই প্রথমে শুনলাম সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ ‘জলরঙ’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় নাম লেখাচ্ছেন নবাগত চিত্রনায়িকা উষ্ণ হক। তিনিও সিনেমাটির মুক্তির খবর জানেন না বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানান। উষ্ণ বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মুক্তির খবর জানতে পারলাম। তার আগে ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে সেই খবরও জানানো হয়নি। শিল্পী হিসেবে আমাদের জানালে ভালো লাগত, প্রচারণায় অংশ নিতে পারতাম। তা ছাড়া মানহীন পোস্টার করা হয়েছে। মুক্তির দিক দিয়ে এটি আমার প্রথম সিনেমা। জলরঙ ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এখন হতাশ হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।

আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে দুঃখজন ছাড়া কিছুই এখন বলার নেই।’ সাইমনের মতো অবস্থা নির্মাতা কবিরুল ইসলাম রানারও। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকে ‘জলরঙ’ মুক্তির খবর পেয়েছেন। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে এই পরিচালক বলেন, ‘সিনেমা সেন্সর পেয়ে গেলে প্রযোজক মাতব্বর হয়ে যায়। তখন পরিচালকের কাছে তেমন শোনার প্রয়োজন মনে করে না। এখানেও সেরকম মনে করতে পারেন।

তবে আমি মনে করি মুক্তির কমপক্ষে এক মাস আগে পরিচালক, অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে প্রযোজকের বসা উচিত ছিল। কেননা সিনেমার প্রচারণার একটি বিষয় আছে। এভাবে প্রচারণা ছাড়া সিনেমা মুক্তি জন্য ক্ষতিকর।’ সময়টা সিনেমা মুক্তির উপযুক্ত না উল্লেখ করে নির্মাতা রানা বলেন, ‘তা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি এখন অস্থিতিশীল। এই মুহূর্তে সিনেমা মুক্তি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সেটাও ভাবা উচিত ছিল।’ এদিকে শোনা যায়, সিনেমার সঙ্গে যুক্ত অনেকের পারিশ্রমিক বকেয়া রয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘আমার মনে হয় সিনেমা মুক্তির পর প্রযোজক বিষয়গুলো দেখবেন। শিল্পীদের বকেয়া পারিশ্রমিক শোধ করবেন।’ জানা গেছে, প্রযোজক-পরিচালক সম্পর্কে মামু-ভাগিনা হলেও এখন তাদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক! উভয় একে অন্যের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ করেছেন তাদের সংগঠনকে। যদিও এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সিনেমার এক অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘প্রায় তিন বছর হয়েছে সিনেমাটির কাজ শেষ করেছি কিন্তু আজও ন্যায্য পারিশ্রামিক পাইনি। অনেকবার তাগিদ দিয়েও লাভ হয়নি। তার মধ্যে আমাদের না জানিয়ে প্রচারণা ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হলো। বিষয়টা সত্যিই দুঃখজনক।

এতের মতো লোকদের জন্য সিনেমার আজ দুর্দশা।’ সরেজমিনে দেখা যায়, প্রযোজকের অফিসে এক টেকনিশিয়ান পাওয়ান টাকা আনতে গিয়েও ফেরত যান। সিনেমা মুক্তির পর প্রযোজক টাকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক বুকিং এজেন্ট বলেন, ‘প্রথমবার কোনো সিনেমার এত কমসংখ্যক পোস্টার করলাম।  মাত্র ২ হাজার পোস্টার ছাপানো হয়েছে।

১২ হাজারের নিচে কখনো পোস্টার করতাম না। অথচ হল প্রতি ছয়শ পোস্টার দিতে হয়। কিন্তু নামেমাত্র জলরঙ মুক্তি পাচ্ছে। যেহেতু অনেকদিন ধরে নতুন সিনেমা নেই। চলার জন্য এই সিনেমার কাজটি করছি।’ এই অনিয়ম প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। সাইমন ও উষ্ণ ছাড়াও ‘জলরঙ’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, প্রয়াত মাসুম আজিজ, ফারজানা সুমি, ফারজানা রিক্তা, রাশেদ মামুন অপু, আশীষ খন্দকার, জয়রাজ, এলিনা শাম্মি, খালেদা আক্তার কল্পনা, রাশেদা চৌধুরী প্রমুখ।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!