ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

এখনো অনেক কাজ বাকি

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:৩২ এএম

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। নাটক, টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্র সবক্ষেত্রেই তিনি নিজের স্বকীয়তা দিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। আজ পূর্ণ হলো তার পরিচালনা জীবনের দুই যুগ। দীর্ঘ এই পথচলায় তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য নাটক এবং বড় পর্দার জন্য নির্মাণ করেছেন তিনটি চলচ্চিত্র। অভিজ্ঞতা, সাফল্য আর চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠা এই নির্মাতা বিশেষ দিন উপলক্ষে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তার যাত্রাপথ, বর্তমান কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিবুল ইসলাম আফ্রিদি

বর্তমান ব্যস্ততা?

একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট তৈরি আছে, খুব দ্রুত শুটিংয়ে যাব। আর ওয়েব সিরিজের স্ক্রিপ্ট রেডি আছে। কাজ চলছে।

পরিচালক জীবনের ২ যুগ পূর্ণ। অনুভূতি কেমন?

কখনো ভাবিনি দুই যুগ অতিক্রম করে ফেলব। ক্যারিয়ারের শুরুর সময় হয়তো আমার মনে হতো দুই যুগ পার করাটা তো যথেষ্ট। আজকের এই দুই যুগ পূর্তিতে এসে আমার মনে হচ্ছে আসলেই এটা যথেষ্ট না। আমার আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে। একটি ওটিটি সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম করতে হবে। প্রথম দিকে যেরকম সিগনেচার কিছু কাজ উপহার দিয়েছি, সেরকম আরও কিছু কাজ এখন উপহার দিতে চাই। যেগুলো দর্শক হৃদয়ে গেঁথে থাকবে এবং আমাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে। দীর্ঘ পথচলায় সবার অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এখনো পরিশ্রম করছি। পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ওপরে যিনি আছেন তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমার সকল শিল্পী, রাইটার; প্রযোজক, চ্যানেলের হেড, সাংবাদিক যারা আমাকে যোগ্যতার থেকেও অনেক বেশি সাপোর্ট দিয়েছে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

২ যুগ পূর্তিতে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা?

দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে ঈদে টেলিভিশনে প্রচার হওয়া আমার তিনটি নাটক ইউটিউবে মুক্তি পাবে। প্রত্যেকবার যুগ পূর্তির দিন আমি প্রথমে মন্দিরে যাই তারপর এতিমখানা বা একটি অনাথ আশ্রম যাই। প্রত্যেকবার আমি হাসপাতালে অসুস্থ কাউকে না কাউকে দেখতে যাই। এর আগে গিয়েছিলাম আবু হেনা রনিকে দেখতে। এবার যাবো লাইটম্যান রবিনকে দেখতে। তাকে দেখার ইচ্ছা আছে।

পরিচালনায় আসার প্রেরণা ও শুরুটা জানতে চাই

শুরুটা যেমন কঠিন ছিল, এখনো কঠিন। আমার পথ সবসময় কঠিন। আমি যতটুকু, যা অর্জন করেছি; পরিশ্রম করে অর্জন করেছি। শুরুটা হয়েছিল এমন রাইটারের একটি সম্মানী আনতে গিয়েছিলাম, তখন রাইটার মজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলাম কে ডিরেকশন দিবে; সে তখন বলল আমার কথা। এভাবেই আমার শুরুটা। কাজটি প্রকাশ পেয়েছিল ৫ বছর পর। তার কয়েকদিন পরেই আমার বোন ফোন দিয়ে বলল, ‘আমাকে একটা নাটক বানিয়ে দে, এড মিডিয়া থেকে যাবে।’ এটা শুনে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমার প্রথম লেখা ও পরিচালিত প্রচারিত নাটক ‘এক জীবনে’। শুরুটা তিনজন ব্যক্তির মাধ্যমে হয়েছিল। তাদের প্রতি আমি ঋণী। এই প্ল্যাটফর্মটি না পেলে যোগ্যতা দেখানো হতো না। এই দীর্ঘ যাত্রায় ৪৬৮টি টেলিফিল্ম, ১৮টি ধারাবাহিক নাটক এবং তিনটি সিনেমা নির্মাণ করেছি। 

প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

প্রথম দিন আমার যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল, এখনো প্রত্যেকটি কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমি সবসময়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই কাজ করি। চ্যালেঞ্জ আমাকে ছাড়ে না। আমাকে আজীবন পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষা দিয়েই আজ আমি চয়নিকা চৌধুরী হয়েছি। এ জন্য আমি গর্বিত, আমার আইডেন্টিটি আছে। মানুষ আমাকে চিনে এবং জানে এটাই আমার আইডেন্টিটি। আমার কাজ আমাকে চিনিয়েছে। আমি পরিশ্রম ভালোবাসি।

এই দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে বড় শিক্ষা কি?

এই দীর্ঘ যাত্রায় শিক্ষা অনেক কিছু। যদি কাজের প্রতি সততা, যতœ; ভালোবাসা এবং ইচ্ছা থাকে, যদি জেনে বুঝে কাজটি করা যায় তাহলে তাকে কেউ কোনোদিন দমিয়ে রাখতে পারে না। যখন কেউ একটি জায়গায় পৌঁছায় তখন চারপাশ থেকে অনেক মিথ্যা সমালোচনা আসে। মিথ্যা কথা বলে মানুষ। ঐগুলো ধরে রাখা যাবে না। শুধু শিল্পী হলেই হবে না, একজন শিল্পীকে অনেক নমনীয় ও বিনয়ী হতে হবে। তার আচরণ সুন্দর হবে, ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। তাহলে সে শিল্পী এবং সম্মান করতে জানতে হবে। 

কোন কাজটি টার্নিং পয়েন্ট?

একটি অন্য কাজে গিয়ে যখন হঠাৎ করে আমাকে বলা হলো আপনি পরিচালনা করবেন, ওইটাই আমার জীবনের মোড়। আমার গায়িকা হওয়ার কথা ছিল। এই জায়গা থেকে আমি একজন পরিচালক এবং রাইটার। এটাই আমার জীবনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত।

দর্শকের রুচি ও চাহিদায় এই ২ যুগ কী কী পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?

অনেক পরিবর্তন। পরিবর্তন থাকবেই। পৃথিবীতে সব কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের সময় যেমন ৯০ দশক, তখন ফেসবুক অনলাইন ইউটিউব এসব কিছুই ছিল না। শুধু একটাই টিভি ছিল। একটাই টিভিতে প্রচ- প্রতিযোগিতা। বড় বড় নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। তারপর দুই তিনটা চ্যানেল আসা শুরু হলো, এরপর ফেসবুক। এখন বিশ্বের সবকিছু হাতের মুঠোফোনের মাধ্যমে দেখে ফেলে। তাই প্রতিযোগিতা অনেক। মানুষের চিন্তাধারার বদল হয়েছে। প্রতিদিনই পরিবর্তন হবে। ৯০ দশকের আমরা যারা আছি এই নতুনদের সঙ্গে মিলিয়ে পথ চলতে পারছি, এটাই সৌভাগ্য বলে মনে করছি।

কোন মাধ্যমে কাজ করা বেশি চ্যালেঞ্জিং?

সব ধরনের কাজেই চ্যালেঞ্জিং। সব জায়গাতেই চ্যালেঞ্জ আছে। টেলিভিশন একটি ফিকশন মানুষ বলে না, নাটকের মতো সিনেমা; কেন বলে? ফিকশনটাই সিনেমার মতো বানানো হয়। মনে হয় একটি সিনেমা দেখে উঠলাম। সিনেমা এবং ওটিটি কেন অন্যরকম, কারণ সিনেমা একটি বড় ক্যানভাস। ওখানে একটি অন্ধকার ঘর, সেখানে সবার চোখ একটা জায়গাতেই থাকে। তাই পার্থক্য থাকবেই। কাজ জানা থাকলে এই পার্থক্যগুলো তেমন ম্যাটার করে না।

দর্শকদের জন্য বিশেষ বার্তা কি থাকবে?

সকল দর্শকরা আমাকে প্রার্থনায় রাখবেন। দর্শকদের জন্যই আজ আমি চয়নিকা চৌধুরী। দর্শকদের ভালোবাসা নিয়েই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পথ চলতে চাই। আমার এখনো তিনটি স্বপ্ন পূরণ করা বাকি আছে। তা হচ্ছে, একটি সাত পর্বের ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্ম এবং একটি সিনেমা। যেটা আমার সিগনেচার বহন করবে। এই কাজগুলো শেষ না করতে পারলে আমার খুব মন খারাপ হবে। দর্শকদের ভালোবাসা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।