ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

অবৈধ স্ট্যান্ডে নাকাল জনজীবন

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নলখোলা মোড় এলাকায় সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারী, শিক্ষার্থী ও যাত্রীসাধারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পূজাখোলা থেকে শুরু করে নলখোলা পর্যন্ত মোড়টি বরিশাল, ঢাকা ও দশমিনার প্রবেশপথ হওয়ায় এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে দশমিনা, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার তিনটি প্রধান সড়কের সংযোগস্থল এই মোড়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী যানবাহনের স্ট্যান্ড। সড়কের দুই পাশে সারি সারি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখায় পথচারীদের হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। বাধ্য হয়ে মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করছে। ফলে বড় কোনো যানবাহন এলেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজ শুরুর সময় ও ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। নলখোলা এলাকার আশপাশেই রয়েছে দশমিনা সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেগম আরেফাতুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আব্দুর রশিদ তালুকদার সরকারি কলেজ, ডা. ডলি আকবর মহিলা কলেজ এবং একাধিক কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যানজটের ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ‘পুরো সড়কটি দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। ফুটপাত দখল করে রেখেছে অটোরিকশাগুলো। হেঁটে চলার সুযোগ নেই। মাঝখানে সামান্য জায়গা দিয়ে সব যানবাহন চলাচল করছে, তাই সব সময়ই যানজট লেগে থাকে।’
চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়ছেন। দশমিনা সরকারি আব্দুর রশিদ তালুকদার কলেজের কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন চেয়ারম্যান মার্কেটের সামনে দীর্ঘ যানজটে পড়েছিলাম। ফলে সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত এই অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে যানজট নিরসন করা হোক।’
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা ছাত্রদলের মানবিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. আবুল বশার বলেন, ‘দশমিনা একটি সুশৃঙ্খল উপজেলা হলেও ইদানীং অতিরিক্ত যানবাহন প্রবেশ করায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ফুটপাত দখল করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও এ সমস্যার পেছনে দায়ী। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না। আমরা প্রশাসনকে সবধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নলখোলা বন্দরের মেসার্স শর্মী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জুয়েল আমিন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে বরিশাল ও ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। সাবেক ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কিছুটা সমাধান করেছিলেন। তবে স্থায়ী সমাধানে দুটি গোলচত্বর নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি।’
অবৈধভাবে সড়কের পাশে যানবাহন রাখার বিষয়টি স্বীকার করে দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আব্দুল আলিম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত একটি অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসনাত মো. আরেফীন জানান, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এখনো অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তবে আবহাওয়া ভালো হলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
স্থানীয়রা মনে করছেন, উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই দ্রুত স্থায়ী সমাধানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন তারা।