বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামে সন্ধ্যা নদীতে সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। আবার বিকল্প সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে খেয়া (নৌকা) পারাপার হয় স্থানীয়রা। আর এতে সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়ে শিশু ও বয়স্করা। ইতিমধ্যে ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল পাননি ভুক্তভোগীরা। প্রয়োজনের তাগিদে শত বছরের খেয়াঘাট দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজর পড়েনি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, বিকল্পে সেতু না থাকায় পয়সারহাট, বাগধা ও আমবৌলা এই তিন গ্রামের মানুষকে ১০ কিলোমিটার বেশি ঘুরে গোপালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কের পয়সারহাট সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। এ ছাড়া নদীর পশ্চিম পাড়ে একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ স্থানীয় হাট-বাজার থাকায় নদীর পূর্ব পাড়ের শিক্ষার্থী ও লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হলো খেয়া। বর্ষ ও ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে খেয়া পার হতে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা পড়ে চরম ভোগান্তিতে।
এদিকে পয়সারহাটে অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে ভুক্তভোগীদের সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। এ কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী সহস্রাধিক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে এখানে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি ভুক্তভোগী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর এপার থেকে অন্তত ২৫ জন যাত্রী ওপারে যাওয়ার জন্য ঘাট থেকে খেয়ায় চেপেছে। এর মধ্যে শিশুসহ ১০ জন ছাত্রীও রয়েছে। খেয়া হালকা দোল খেলেই ভয়ে খেয়ার কাঠ শক্ত করে ধরে তারা। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভয় আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে আসছে এসব গ্রামের লোকজন।
এলাকাবাসী জানান, সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নদীর এপারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা। ওপারে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয়। তাই ওপারের অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় আসতে হয়। অন্যদিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় ওপারে অর্থাৎ নদীর পূর্ব পাড়ে হওয়ায় গ্রামবাসীকে প্রতিদিনই ওপারে যেতে হয়। পয়সারহাটে অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। এ জন্য খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হতে হয়। নদীতে ভাটির সময় খেয়া কিনারায় না আসাসহ বর্ষা ও ঝড়-বৃষ্টির সময় খেয়ায় উঠতে ও নামতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়াই স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের পেশার কারণেই তাদের প্রতিদিন এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। কাঁচামাল সংগ্রহ করে এপারে আনতে বেশ কষ্ট করতে হয়। আবার অনেক সময় শুকনো মাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে উপকৃত হবে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ। আমরা এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাগধা স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী সিনথিয়া খাতুন বলে, ‘এখানে খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। খেয়ায় উঠতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে গিয়ে আহত হই এবং সময়মতো খেয়া না পেলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা সান্টু সরদার বলেন, ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় ওপারে হওয়ায় আমাদের প্রতিদিনই সেখানে যেতে হয়। পয়সারহাটে অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। এ জন্য আমরা খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হয়ে থাকি। নদীতে ভাটার সময় খেয়ানৌকা কিনারে না আসাসহ ঝড়বৃষ্টির সময় নৌকায় উঠতে ও নামতে অনেক সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বাবু রবীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, বাগধা খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা এখনো নেওয়া হয়নি। গত বছর নদীর দুপাশে ঘাট স্থাপনা করা হয়েছে। পরে টেন্ডার হলে সেতুর কাজ ধরা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :