অনেক প্রচেষ্টার পর বাবা হয়েছিলেন জুলাই শহিদ রাজশাহী মহানগরীর গুঁড়িপাড়ার মিনারুল ইসলাম (২৭)। সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু চিরদিনের জন্য সন্তানের সঙ্গে আর দেখা করতে পারবেন না মিনারুল।
জানা যায়, গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুথানে নিহত হয়েছেন মিনারুল ইসলাম। তখন তার স্ত্রী সাত মাসের গর্ভবতী। নিহতের তিন মাস পরে মিনারুলের সংসারে আসে ফুটফুটে পুত্রসন্তান। ছেলের নাম রাখা হয় মিনহাজুল ইসলাম সাইফান। শিশু সাইফান কোনো দিন তার বাবাকে দেখতে পাবে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিনারুলের স্ত্রী নূরেসান খাতুন শম্পা।
আট বছর অপেক্ষার পর বাবা হয়েছিলেন মিনারুল। অথচ কাক্সিক্ষত সেই সন্তানের মুখ দেখার আগেই জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এই যুবক। স্বামীর শোকে কাতর স্ত্রী নূরেসান খাতুন শম্পা। স্বামী হারানোর ২ মাস ৯ দিন পর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম সাইফানের জন্ম হয়। তার বয়স এখন ৯ মাস। ছোট্ট সাইফান এখনো বোঝে না, বাবা প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য। তাই বাবার সঙ্গে তার আর কোনো দিনই দেখা হবে না।
মহানগরীর গুঁড়িপাড়ার পুরাপাড়া এলাকায় শহীদ মিনারুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে মিনারুলের মা ডলি বেগম আর বড় দুই ভাই মো. সোহেল ও নাজমুল হক থাকেন। তারা সিএনজি অটোরিকশা চালান। তাদের বাবা আগেই মারা গেছেন। আর মিনারুল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। জুলাই গণঅভ্যুথানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে বের হয়ে গত বছরের ২০ জুলাই দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তার স্ত্রী নূরেসান তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর গ্রামে বাবা মো. সাইদুলের বাড়িতে থাকেন নূরেসান। সেদিনও ২০ জুলাই দুপুরে স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মিনারুল খেয়েছেন কি না, জানতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাইরে তো খুব গ্যাঞ্জাম চলছে। আপনি বাইরে যাইয়েন না।’ কিন্তু মিনারুল গিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জুলাই-যোদ্ধারা মিনারুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরদিন রাজশাহীর গুঁড়িপাড়ার পুরাপাড়ার বাড়িতে মিনারুলের মরদেহ আনা হয়। তখন ছুটে আসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা রজব আলী। তিনি পরিবারকে ভয় দেখান যে ‘মিনারুল গুলিতে নিহত হয়েছে’ এ কথা বলা যাবে না।
মিনারুলের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়Ñ এমন মৃত্যুসনদ লিখে তড়িঘড়ি মরদেহ দাফন করিয়ে দেন। সরকারের পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর মিনারুলের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
স্বামীহারা নূরেসান খাতুন বলেন, বাবা না থাকায় কে ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে দিবে? স্বামী মারা যাওয়ার পর মায়ের বাড়িতে থাকি। আমার বাবাও দিনমজুর। আমাদের তো সামর্থ্য নেই। ছেলের ভবিষৎ নিয়েও চিন্তিত তিনি। নূরেসান চান স্বামীকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের যেন বিচার হয়।
আপনার মতামত লিখুন :