উন্নয়নের আশ্বাসে বুক বেঁধেছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জবাসী। ভেবেছিল, বহু বছরের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে এবার। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়ক এখন পুরো অঞ্চলের মানুষের জন্য মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে।
জানা যায়, রূপগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কটি রাজধানীর পাশের তিনটি ইউনিয়ন রূপগঞ্জ সদর, দাউদপুর ও কায়েতপাড়াসহ ১২৬ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। সড়কের দুপাশে থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস থেকে শুরু করে রয়েছে অসংখ্য শিল্পকারখানা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু একটি যোগাযোগের সড়ক নয় বরং একে বলা হয় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবাহের প্রাণশিরা।
২০২০ সালে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক প্রশস্তকরণে সরকার বরাদ্দ দেয় ৮৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় এনডিই ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী সড়ক হবে ১৮ ফুট প্রশস্ত। সড়কের পাশে ছয় ফুট মাটি ভরাটের সঙ্গে থাকবে কালভার্ট। বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ করে হবে টেকসই সড়ক নির্মাণ। কিন্তু বাস্তবে উপজেলার ফজুরবাড়ি থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার কাজ কোনোমতে হলেও চনপাড়া থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত সড়ক পড়ে রয়েছে অবহেলায়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই বিভিন্ন স্থানে ঢালাই করে ফেলা হয়েছে।
এদিকে রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নবগ্রাম ও মুশুরী থেকে সাহাপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পর এসব গর্তে জমে থাকে পানি। পথচারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী-পুরুষ এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও পড়ছে চরম দুর্ভোগে।
চালকেরা জানান, প্রতিদিনই ছোট গাড়ি গর্তে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বড় যানবাহনের যন্ত্রাংশও নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসীর মতে, এই সড়ক এখন আর রাস্তা নয়, যেন এক ‘চলন্ত মরণফাঁদ’।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বাজারজাত করা যায় না। আবার পরিবহন খরচ ও সময় বেশি লাগছে। তাতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
মামুন হায়দার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ফজুরবাড়ি থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার কাজ কোনোমতে হলেও চনপাড়া থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত সড়ক পড়ে রয়েছে অবহেলায়। এ সড়ক দিয়ে এখন আর চলাচল করা যায় না। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই সেগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বিপদ আরও বাড়ে।
সিএনজি অটোচালক জাহাঙ্গীর বলেন, এই সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টসাধ্য। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রোগী থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। দ্রুত সংস্কার চাই।
শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষায় সড়কে পানি আর গ্রীষ্মে ধুলোবালুর কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা চোখ ও শ্বাসজনিত রোগে ভুগছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনবার ঠিকাদারকে ডেকেছি, কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাতই করেননি। সড়ক দিয়ে ঠিকমতো চলাচল করতে না পারায় জনবহুল এই এলাকার অপরাধ দমনেও বেগ পেতে হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা বুঝি। এ কারণে বারবার ঠিকাদারকে চাপ দিচ্ছি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, ২০২৪ সালের আগস্টের পর ঠিকাদার গড়িমসি শুরু করে। চাপ প্রয়োগ করার পর ঠিকাদার আবার কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি, আগামী দুই মাসে সড়ক চলাচলের উপযোগী হবে।
আপনার মতামত লিখুন :