সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৪:৫৩ এএম

বিচারের আশায় চোখের জলে মায়ের অপেক্ষা

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৪:৫৩ এএম

বিচারের আশায় চোখের  জলে মায়ের অপেক্ষা

‘আমার সহজ-সরল পোলাডারে ওরা গুলি কইরা মারছে। এক বছর হইয়া গেল, পোলা হারাইছি। আমার পোলার হত্যার বিচার চাই।’

কথাগুলো বলছিলেন, চোখের পানি মুছতে মুছতে শহিদ আসিফুর রহমান আসিফের মা ফজিলা খাতুন। বুকের ভেতর জমে থাকা অসীম কষ্ট আর কান্নাভেজা কণ্ঠে এভাবেই ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চাইলেন তিনি।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৭ বছর বয়সি গার্মেন্টসকর্মী আসিফ। তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলেও বিচার এখনো অধরা।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আসিফ ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। পরিবারে টানাপড়েন লেগেই ছিল। বাবার ছোট্ট ব্যবসা দিয়ে সংসার চলছিল না। তাই মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটাতে কিশোর বয়সেই ঢাকায় এসে একটি গার্মেন্টসে কাজ নেয় সে। মাসে ১৩ হাজার টাকা বেতনে সবে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল।

ঘটনার দিন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয় আসিফ। সেদিন মিরপুরের রাস্তায় চলছিল উত্তাল কোটা সংস্কার আন্দোলন। আন্দোলনরত জনতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আসিফ। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একটি সম্ভাবনাময় জীবন থেমে যায় সে দিন। চোখের সামনে সব স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায় আসিফের বাবা-মায়ের। ঘটনার পর দীর্ঘ অপেক্ষা আর বুকভাঙা কষ্ট নিয়ে গত বছরের ২ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতে হত্যা মামলা করেন বাবা আমজাদ হোসেন। মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০১ জনকে আসামি করা হয়। এরপর কবর থেকে উত্তোলন করা হয় আসিফের মরদেহ এবং সম্পন্ন হয় ময়নাতদন্ত।

কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত থেমে আছে, বিচারও অধরাই থেকে গেছে।
আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে শহিদ হয়েছে এক বছর হলো। মামলা করতে গিয়ে তিনবার আদালতে গিয়েছি। এরপর কিছুই জানি না। আমি সরকারের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। কিন্তু টাকা দিয়ে কী হবে? আমার তো ছেলে ফেরত আসবে না। আমি শুধু চাই, যারা ঠান্ডা মাথায় আমার পোলারে হত্যা করছে, তাদের বিচার দেখে মরতে পারি।’

বিচারহীনতার এই এক বছরে থেমে নেই ফজিলা খাতুনের কান্না। বুকের ভেতর জ্বালা নিয়ে তিনি আজও ছেলের ছবি বুকে চেপে ঘুরে বেড়ান। যে ছেলের স্বপ্ন ছিল সংসারকে সুন্দর করে গড়ে তোলার, সেই ছেলে আজ কেবলই স্মৃতি।
আসিফ এখন আর কারো গার্মেন্টস কর্মী নয়, সে একজন শহিদ, যার রক্তে লেখা হয়েছে একটি সময়ের আন্দোলনের ইতিহাস। কিন্তু তার মৃত্যু এখনো বিচার পায়নি। এক বছর পরেও জবাব নেই রাষ্ট্রের, নেই দোষীদের শাস্তির আশ্বাস।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও এক নাম, নাহিদ আসিফ। যে নাম এখন একটি পরিবারের বুকভাঙা কান্না আর বিচারের অপেক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!