নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানায় আটক আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে লাগছে টাকা। শুধু সাক্ষাৎই নয়, টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে খাবার পৌঁছানোর সুযোগ, ধূমপান এমনকি মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগও! সরেজমিনে গিয়ে এমন অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে, যা প্রশ্ন তুলেছে আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আসামির স্বজনরা দেখা করতে চাইলে প্রতি মিনিটে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। কেউ ৫০০ টাকা দিলে, দেওয়া হচ্ছে খাবার পৌঁছানোর অনুমতি, এমনকি ধূমপান বা মোবাইলে কথা বলার সুবিধাও। টাকা না দিলে নানান টালবাহানা ও আইনগত নিয়ম দেখিয়ে স্বজনদের ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
গারদখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেলের দক্ষিণ পাশের বারান্দায় এক আসামি সিগারেট হাতে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তার ঠিক পাশেই বেঞ্চে বসে আছেন এক পুলিশ সদস্য। জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘পুলিশকে ৫০০ টাকা দিলেই সব পাওয়া যায়।’
পতœীতলা উপজেলার মোস্তফা নামের একজন বলেন, ‘আমার মামাতো ভাইসহ চারজন আসামি আটক আছে। দেখা করার জন্য পুলিশকে প্রতি জনে ২৫০ টাকা করে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। এর আগের তারিখে দেড় হাজার টাকা নিয়েছিল।’
সাপাহারের আশড়ন্দ থেকে আসা নুরনবী জানান, ‘আমার ভাই রাজনৈতিক মামলায় আটক। প্রথমে ২০০ টাকা দিলে ১০ মিনিট কথা বলতে দেয়। পরে আরেকবার ৩০০ টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা দেখা করতে দেয়।’
এএসআই আলমগীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কোনো টাকা নেই না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ তবে সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘ভেতরে আসেন, বসে কথা বলি, বিষয়টা মীমাংসা করি।’
নওগাঁ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক এ.কে.এম নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মানবতার খাতিরে শুকনো খাবার ও পানি পৌঁছাতে দেই। প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার (বিপিএম) বলেন, ‘আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অনিয়মের দৃশ্যমান প্রমাণ ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য যেখানে স্পষ্ট, সেখানে পুলিশ সদস্যদের অস্বীকার ও বিষয় মীমাংসার প্রস্তাব আরও প্রশ্ন তুলে দেয়। আদালত চত্বরে এমন অবৈধ সুবিধা আদায়ের ঘটনা শুধু পুলিশের ভাবমূর্তি নয়, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।