ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

হীরেশ ভট্টাচার্য হিরো, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৩:৫১ এএম

আগামী জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিগঞ্জ-৪ মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রার্থীরা নানাভাবে নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন নানা সামাজিক কর্মকা-ে। অতিথি হয়েছেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে এলাকাবাসীর কাছে চাইছেন দোয়া ও সমর্থন। চষে বেড়াচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায়। সাধারণ জনগণের মন জয় করতে দিচ্ছেন উন্নয়নমূলক নানা প্রতিশ্রুতি। পাহাড়-টিলা পর্যটন ও চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-৪ মাধবপুর-চুনারুঘাট আসন। মাধবপুর উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং চুনারুঘাট উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে হবিগঞ্জ-৪ আসন গঠিত। তা ছাড়া মাধবপুরে ৫টি ও চুনারুঘাটে ১৯টি চা বাগান রয়েছে।

এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৫০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন, ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৭ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫ জন। ওই আসনে এবার নির্বাচনি প্রচারণা করছেন ৩ প্রার্থী। তারা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ সৈয়দ মো. ফয়সল, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যগ্ম আহ্বায়ক শাম্মী আক্তার শিপা ও কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তারাও রয়েছেন মাঠে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে করেছেন কৌশল বিনিময়।

তাদের প্রচারণায় ইতোমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে ২ উপজেলার হাট-বাজার। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ওই প্রার্থীরা করছেন সভা সমাবেশ। এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী সৈয়দ মো. ফয়সল। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান সৈয়দ মো. ফয়সল। এর আগে ১৯৯১-২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ৪ বার এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হন। প্রতিবারই তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. পারভেজ হোসেন চৌধুরী বলেন, মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে আলহাজ সৈয়দ মো. ফয়সলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের সম্পর্ক।

তার ২ ছেলে শিল্পপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মো. ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মো. সাফকাত আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে তার পিতার অনুসারী হয়ে মাধবপুর-চুনারুঘাটে যুব সমাজের ব্যাপক আলোরণ সৃষ্টি করেছেন। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। কারণ জনসাধারণের কাছে তাদের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সৈয়দ মো. ফয়সল বিএনপির দলীয় ভোট ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দেবেন সর্বস্তরের মানুষ। এর কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি এমপি না হয়েও সবার সুখে-দুঃখে, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

তার পরিবার বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে অসচ্ছল মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। বন্যাসহ যে কোনো দুর্যোগে তিনি শীতবস্ত্র, বিনা মূল্যে চক্ষু চিকিৎসা, স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণসহ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান, ঈদসামগ্রী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায় উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। মাধবপুর উপজেলার বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. উলি উল্লাহ বলেন, সৈয়দ মো. ফয়সল তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রাণ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ওই আসনের স্থানীয় জনগণের  সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গত ১৫ বছর বিএনপির যেসব নেতাকর্মী হামলা-মামলায় নিষ্ক্রিয় ও বিপর্যস্ত ছিলেন তাদের সংগঠিত করেছেন সৈয়দ মো. ফয়সল। নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গেও ব্যাপক যোগাযোগ রয়েছে তার। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

বিভিন্ন এলাকায় করেছেন শতাধিক উঠান বৈঠক। একমাত্র কারিগর হিসেবে পরিচিত সৈয়দ মো. ফয়সলকে নিয়েই ওই আসনের জনগণের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যগ্ম আহ্বায়ক শাম্মী আক্তার শিপা ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তিনিও মাধবপুর-চুনারুঘাট নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাধবপুর-চুনারুঘাট নির্বাচনি মাঠে গণসংযোগ করছেন।