উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙালি নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচটি গ্রাম। ইতিমধ্যে অন্তত ১২০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ওই সব গ্রামের প্রায় আট হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। এ ছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান ও মক্তব।
সরেজমিনে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বরিতলী ও বিলনোথার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নদীর করাল গ্রাসে বরিতলী গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার এবং বিলনোথার গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ১৫ জুলাই থেকে এ ভাঙন শুরু হয়। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১২০ বিঘা ফসলি জমি। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নবীনগর, শইলমারি ও শান্তিনগর গ্রাম।
স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহে শেরপুরে টানা ভারী বর্ষণের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছরই ভাঙন রোধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। ফলে প্রতিবছর নতুন করে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। স্থানীয়রা দ্রুত নদীভাঙন প্রতিরোধ কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বরিতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার বাবাসহ আমি সাতবার এই নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। গত বছর পাঁচ বিঘা জমি ও ফসল নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে আমি নিঃস্ব হয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম। এবার হয়তো ঘরটাও আর থাকবে না।’
বিলনোথার গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার বহু জমিজমা ছিল। এখন কিছুই নেই। নদী আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। আমার ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। নিজের ভিটমিাটি হারিয়ে সেই দুঃখে তিনি আর গ্রামেও আসেন না।’
শৈলমারী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবুল ফজল বলেন, ‘১৯৮৮ সাল থেকে এই নদীর ভাঙন দেখে আসছি। মায়ের মুখে শুনেছি, নানার বাড়ি ১২ বার ভেঙেছে। আমি নিজেও সাতবার বাড়ি সরিয়েছি। এবারও হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।’
এদিকে ভাঙনের কবলে পড়েছে বরিতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াবাড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিতলী জামে মসজিদ, একটি নুরানি মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মক্তব। এসব প্রতিষ্ঠান এখন নদীভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে টিকে থাকার লড়াই করছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘ভাঙনস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দেড়শ মিটার কাজ বাস্তবায়নে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। দ্রুতই এই প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’