রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, (কালীগঞ্জ) লালমনিরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম

তিস্তা-ধরলার পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙন

হাসানুজ্জামান হাসান, (কালীগঞ্জ) লালমনিরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম

তিস্তা-ধরলার পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙন

তিস্তা নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগে লালমনিরহাটের নদীপাড়ের বানভাসি মানুষ। নদীভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীতীরবর্তী মানুষ। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি ও বসতভিটা।

কৃষক পরিবারগুলো হারাচ্ছে জীবিকা, ঘরবাড়ি এবং বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও। গত ১০ বছরে তিস্তা ও ধরলার কড়াল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা-ধরলাপাড়ের মানুষের।

চলতি বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি ছিল। অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন। কেউ কেউ রাস্তায় একচালা ঘর তুলে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার মধ্য রাতে হঠাৎ তিস্তার পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে তীরবর্তী এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। গত বুধবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তা বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল শনিবার বিপৎসীমার ৩৫ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। বন্যার ফলে অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে, পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।

এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোনো কোনো স্কুলের শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকেছে।

এ কারণে লালমনিরহাট সদরের ৬টি ও আদিতমারীর ৬টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটন দাস বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ রোববার থেকে পাঠদান যথারীতি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে তিস্তার তীরে বসে কূলভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক আকবর আলী (৬৫)। তার চোখ-মুখে পৈতৃক একখ- জমি হারানোর শঙ্কা। তিস্তা নদীর পানিও কমছে, ভাঙনও বাড়ছে। বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মনছুর আলী বলেন, ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ নিঃস্ব আমি।

তিস্তাপাড়ের অলিমা খাতুন (৪৫) আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙিয়া গেইছে ব্যাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কই যামো, কী খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে।’

তিস্তাপাড়ের অপর এক ভুক্তভোগী তসর উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘নদীর মাঝখানে আমার বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ যেখানে বাড়ি দেখতেছেন তার পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। নদীর কিনারত (কাছাকাছি) আসছে ভাঙন। সরকার শুধু হামাক বুঝ দেয়।’

তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না বাহে, বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহলে আর নদী ভাঙত না।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীতে এরকম প্রায় ২৫টি এলাকায় কমবেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ভাঙন প্রতিরোধে কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে।’

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!