যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামায় রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। চীন ও ভারতের তুলনায় কম শুল্কে প্রতিযোগিতায় সুবিধা মিলছে বলে মনে করছেন তারা।
যদিও বিদেশি ক্রেতারা দাম কমানোর চাপ দিচ্ছেন, উদ্যোক্তারা বলছেনÑ এবার দরকষাকষিতে বাংলাদেশ অনুকূল অবস্থানে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকলে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কও প্রযোজ্য হবে নাÑ যা তিনি ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জ্বালানি ও অবকাঠামো সংকট নিরসন ছাড়া সম্ভাবনা কাজে লাগানো কঠিন। আর চুক্তির গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে শিগগিরই বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।
মান ও ধরন ভেদে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পোশাকে গড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। সেই বাধা পেরিয়েই মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কিন্তু এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশি পোশাকে যুক্ত হয় অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। যদিও এটি চীন (৩০%) ও ভারতের (২৫%) তুলনায় কম, ভিয়েতনামের (২০%) সমান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক কাঠামোতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দুটোই তৈরি হয়েছে। রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা, সরকারি নীতিসহায়তা জোরদার করা এবং বহুমুখী পণ্য রপ্তানির দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানিয়েছেন, রপ্তানিকৃত পণ্যে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল (যেমন-তুলা) থাকে, তবে ওই অতিরিক্ত শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। তিনি বলেন, আমাদের মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ তুলাভিত্তিক পোশাক। সেক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে না।
তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, শুল্ক কাঠামো এখনো প্রতিযোগিতামূলক হলেও কিছু ক্রেতা দাম কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। এ বিষয়ে শক্তভাবে দরকষাকষি করার সুযোগ থাকলেও কাঠামোগত দুর্বলতাÑ যেমন জাহাজ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে না যাওয়া, লিড টাইম বেশি হওয়াÑ এখনো প্রতিবন্ধক।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে আলোচনার খসড়া চুক্তিতে গোপনীয়তার শর্ত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে তা প্রকাশ করা হবে এবং শিগগিরই একটি যৌথ বিবৃতি আসতে পারে। আলোচনার সময় একপর্যায়ে চুক্তির খসড়া ফাঁস হলেও দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু রাখা হয়নি বলেও তিনি আশ^স্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে নিরাপত্তার কথা বলেছে, সেখানে আলোচনায় গোপনীয়তার শর্ত থাকা স্বাভাবিক। স্বার্থ বিসর্জন দিলে সক্ষমতার ঘাটতি হবেÑ তখন বাণিজ্য চুক্তি করে লাভ হবে না’।
চলমান আলোচনায় ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায়নি বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। বরং যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য রপ্তানিতে। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। সেখানেই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ দেখছে সরকার।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করে। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ, ভারতের ২৬, পাকিস্তানের ৩০ ও ইন্দোনেশিয়ার ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়। ৯ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে চীন ও ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থান নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ২০ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।
তবে শুল্ক ছাড় সত্ত্বেও উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে ছোট ও মাঝারি শিল্পের টিকে থাকার বিষয়টি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। সরকারকে নজর রাখতে হবে যেন ছোট কারখানাগুলো ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু পোশাক নয়, ফুটওয়্যারসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতেও রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। তবে তিনি মনে করেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুদের হার, বন্দর দক্ষতাÑ এই দিকগুলোতে উন্নতি না হলে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগানো কঠিন হবে।
আপনার মতামত লিখুন :