বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম

রাজশাহী শিশু হাসপাতাল

হাসপাতাল আছে, সেবা নেই

জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম

হাসপাতাল আছে, সেবা নেই

  • দুই বছর আগে ভবন নির্মাণ হলেও বুঝে নেওয়া হচ্ছে না
  • মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতে চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা
  • ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকবার দখলচেষ্টা করা হয়
  • অযতœ-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ভবন ও মূল্যবান জিনিসপত্র
  • রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র
  • উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের শিশুরা

রাজশাহীতে ২০০ শয্যার একটি শিশু হাসপাতালের কাজ শেষ হয়েছে অন্তত দুই বছর আগে। অবকাঠামো থাকলেও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে হাসপাতালটি। বিল্ডিং হলেও নেই আসবাবপত্র। নিয়োগ হয়নি ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় লোকবল। ফলে দুই বছরেও চালু করা যায়নি চিকিৎসাসেবা। 


এদিকে রাজশাহীর একমাত্র সরকারি হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শয্যা তো দূরের কথা মেঝেতে জায়গা পায় না রোগীরা। অথচ শিশু হাসপাতাল চালু হলে সেখানে শিশুদের জন্য পুরোপুরি সেবা নিশ্চিত করা যেত। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় একদিকে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের শিশুরা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণেই এত দিন ধরে এ হাসপাতাল চালু হচ্ছে না। অচিরেই কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীবাসী।


জানা যায়, নগরীর টিবিপুকুর এলাকায় পড়ে আছে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট নবনির্মিত শিশু হাসপাতালের ভবন। দুই বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে অযতœ আর অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে ভবন ও মূল্যবান জিনিসপত্র। ভবনে লাগানো এসি এবং হাসপাতালের জন্য কেনা দামি ফ্রিজগুলো নষ্টও হতে চলেছে। সম্প্রতি আরও ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আসবাবপত্র কেনার জন্য। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনবলই নিয়োগ করা হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্থানীয় একটি বাহিনী ভবনটি দখল করারও চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঠিকাদারদের লোকজনের বাধার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বাধা দেওয়ার সময় ঠিকাদারের পাহাদারকে মারধরও করা হয়েছিল ওই সময়। এরপর থেকে সেখানে কিছুটা নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 


সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। সে সময়ই এসি বসানো ও বিল্ডিংয়ে রং করার কাজ শেষ হয়। কিন্তু ব্যবহার না হওয়া ভবনের রংও উঠতে শুরু করেছে। লাগানো এসিগুলো দুই বছর ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হতে চলেছে। কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে বিশালকার দামি দামি ফ্রিজ। যেগুলোয় ওষুধসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখার কথা। এটি চালু না হওয়ায় এবং কোনো কর্তৃপক্ষ বুঝে না নেওয়ায় নির্মাণকাজের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারের একজন লোক দিয়ে হাসপাতাল ভবনটি পাহারা দেওয়া হচ্ছে।


রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত শিশু রোগীর চাপ সামলাতে এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চালু করতেই ২০১৬ সালে পাশেই শিশু হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হয়। কয়েক দফা সময় বৃদ্ধি করে সেই কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতালটি বুঝে দেওয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। কিন্তু তারা আর স্বাস্থ্য বিভাগকে বুঝে দিতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।


ঠিকাদারের পাহারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভবনটি নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পাহারা দিচ্ছি। কেউ কোনো দিন এসে কিছু বলার সাহস পাইনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কয়েক দফা ভবনটি দখলের চেষ্টা করে স্থানীয় মাস্তান বাহিনী। ভবনটি পড়ে আছে বলেই স্থানীয়রা দখল করার চেষ্টা করছে। চালু হলে তো আর করতে পারবে না। আবার একা পাহারা দেওয়ার কারণেও রাতের আঁধারে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি একা মানুষ কয়দিকে শামলাব। এত বড় ভবন পাহারা দেওয়া তো কষ্ট।’


ঠিকাদারের ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সরকার জানান, ভবনটি চালু না হওয়ার কারণে চোরেরা জানালার অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন হস্তান্তরের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না।


রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘আমরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে হাসপাতালটি বুঝে নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছি। কিন্তু জনবল নিয়োগ না হওয়ায় তারাও বুঝে নিতে পারছে না। এ কারণেই পড়ে আছে ভবনটি। আর পড়ে থাকার কারণে অনেক কিছুই নষ্ট হতে বসেছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।’ 


রাজশাহী সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার আগেই হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে জনবল নিয়োগের বা হাসপাতালটি কীভাবে চালু হবে, সে নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। এ কারণে আমরা ভবনটি বুঝে নিতে পারছি না। তবে আসবাবপত্র কেনার জন্য চলতি মাসেই ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান তিনি। 


সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন জানান, শিশু হাসপাতালটি রাজশাহীবাসী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। এটি চালু হলে রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রোগীদের চাপ কমবে। শিশুরা উন্নত সেবা পাবে। এটি অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে যদি চালু না হয়, তাহলে বিষয়টি হবে সত্যিই দুঃখজনক। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং জনবল নিয়োগ দিয়ে দ্রুত এটি  চালুর দাবি জানান তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!