রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের বারনই নদীর তীরে অবস্থিত সাঁওতালপাড়ায় বিএনপি কর্মী বাবলু ও তার অনুসারীদের সশস্ত্র হামলার ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফায় চালানো ওই হামলার পর থেকে ওই এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যরা ঘরবাড়ি ফেলে পালিয়ে গেছেন। ঘরগুলো এখন জনশূন্য। হাঁড়িতে রান্না করা ভাত পচে গেছে, বারান্দায় কাপড় ঝুলছে, অথচ কোনো মানুষ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার কয়েকটি মাটির ঘরের দেয়াল ভাঙা, দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক ঘরে এখনো বিদ্যুৎ বিল টাঙানো অবস্থায় রয়েছে। একটি ঘরের বিল অনুযায়ী, মালিক শ্যামল মুর্মু, এই সাঁওতালপাড়ার সরদার। পাশের আরেকটি বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের কাগজে মালিক হিসেবে নাম রয়েছে বেরজন টুডুর। উভয়ের ঘরেই ভাঙচুরের চিহ্ন স্পষ্ট।
অপর একটি ঘরে মশারি টাঙানো, চৌকি উলটে আছে, হাঁড়িতে পচা ভাতের গন্ধ ছড়াচ্ছে। বারান্দার দড়িতে এখনো ঝুলছে কাপড়চোপড়। প্রতিটি ঘরেই আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
সবাই যখন প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছেন, তখন একজনই রয়ে গেছেন, বৃদ্ধা অমলা দাসী। তিনি জানান, মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে চিকিৎসার জন্য নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে এসেছিলেন। কিন্তু চলাফেরায় অক্ষম হওয়ায় তিনি পালাতে পারেননি। পরিবারের অন্য সদস্যরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় সূত্র ও সাঁওতালপাড়ার সরদার শ্যামল মুর্মু জানান, বাবলুর জমির সামনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন সকালে বাবলুর সঙ্গে পাড়ার এক নারী মালতী দেবীর ময়লা ফেলা নিয়ে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মারধরও হয়। এরপর দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল, হাঁসুয়া, বল্লম, ছোরা।
স্থানীয় এক ভ্যানচালক জানান, দুপুরে প্রথম দফায় এবং সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়। বিকেলের হামলায় আরও কয়েকজন বহিরাগতও অংশ নেন।
বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগম দাবি করেন, সাঁওতালপাড়ার লোকজন তাদের জমিতে ফসল ফলাতে দেয় না। সে দিন মদ খেতে নিষেধ করায় তারা স্বামীকে মারধর করা হয়। তবে বাবলু ঘর ভাঙেননি বলেও দাবি করেন তিনি।
পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, দুপক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। সাঁওতালদের পক্ষে শ্যামল মুর্মু, তার স্ত্রী ও এক ব্যক্তি ছোটন অভিযোগ করেছেন। আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।